images

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনে গড়ে উঠেছে ইসরাইলবিরোধী আরও ১০ সংগঠন

১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৫১ এএম

হামাস ছাড়াও ইসরাইলের ধ্বংস চায়—এমন আরও ১০ দল রয়েছে ফিলিস্তিনে। এসব দল দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের ধ্বংস চায় এবং নিজেদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। যাদের প্রায় সবগুলোতেই আবার গড়ে উঠেছে সশস্ত্র শাখা। সবার উদ্দেশ্য একটাই ইসরাইলের অত্যাচার, আগ্রাসন থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করা। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে একসঙ্গে যুদ্ধ করা। ১০ দলের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলো।

১. ইজ আল-দিন কাসেম ব্রিগেড (আইকিউবি)
এটি হামাসের সামরিক শাখা। এটিকে গাজার প্রথম বৃহত্তম সশস্ত্র দল হিসাবে অভিহিত করা হয়। ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দলটি গঠন করা হয়। ইসরাইলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিকে স্বাধীন করা ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এর মূল লক্ষ্য। 

২. আল-কুদস ব্রিগেড (একিউবি)
ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সশস্ত্র শাখা এটি। হামাসের ইজ আল-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের (আইকিউবি) পর এটিই গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র মুক্তিকামী দল। ১৯৯৫ সালে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ফাথি আল-শিকাকিকে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করে। এরপর থেকে একিউবি আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযান চালায়। 

আরও পড়ুন: হামাসের হাতে বন্দী ১৯৯ জন: ইসরায়েল

৩. আল-নাসির সালিহ আল-দিন
গাজার সশস্ত্র বাহিনীর গ্রুপ পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটির (পিআরসি) সশস্ত্র শাখা আল-নাসের সালাহ আল-দীন ব্রিগেড। তারা হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) শক্তিশালী মিত্র। হামাসের ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড (আইকিউবি) এবং ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডের (একিউবি) পরে আল-নাসির সালিহ আল-দীন গাজায় তৃতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র দল। 

৪. তুলকারম ব্রিগেড
ফিলিস্তিন অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বাহিনীর মোকাবিলায় তুলকারম ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অধিকৃত পশ্চিম তীরে কাজ করে। অন্যান্য মুক্তিকামী দলের মতো তাদেরও লক্ষ্য ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিকে রক্ষা করা।

৫. আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড (এএমবি)
আল-আকসা শহিদ ব্রিগেড (এএমবি) ফিলিস্তিনের নেতৃত্বাস্থানীয় দল ফাতাহর সশস্ত্র শাখা। ২০০০ সালের শেষ দিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে এটি গাজা ও পশ্চিম তীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। লেবাননে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরেও এর সদস্য থাকতে পারে। মুক্তিকামী এ দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত না হলেও অনেক ফাতাহ নেতা এএমবির সঙ্গে একটি অস্পষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছে। গোষ্ঠীটি মূলত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনী এবং ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের তাড়িয়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। 

আরও পড়ুন: পশ্চিমা চাপে নত নই, হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে: মালয়েশিয়া

৬. লায়ন্স ডেন
পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনির নতুন মুক্তিকামী সংগঠন লায়ন্স ডেন ইসরাইলের আরেক ত্রাস। পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে দলটির মূল ঘাঁটি। ২০২২ সালের আগস্টে ইসরাইলি বাহিনী নাবলুস শহরের বিশিষ্ট নেতা ইব্রাহিম আল-নাবলুসিকে হত্যা করে। এ ঘটনার পরপরই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি নিয়মিতভাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। 

৭. ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড
এটি ফিলিস্তিনের ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (ডিএফএলপি) বাহিনীর সামরিক শাখা। দলটি ১৯৬৯ সালে গঠিত হলেও ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হওয়ার পর ডিএফএলপির সশস্ত্র শাখা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ২০০৭ সালে আল-আকসা শহিদ ব্রিগেডসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপদলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৭ সালের মে মাসে তারা ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি বন্দিদের রক্ষা ও জনগণের অধিকার রক্ষা করার জন্য গাজা উপত্যকার একটি সামরিক প্রশিক্ষণের স্থানে আবদেল কাদের আল হুসাইনি ব্রিগেডের সঙ্গে একটি যৌথ মহড়া পরিচালনা করে। চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে যোগ দিয়েছে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ব্রিগেড।

আরও পড়ুন: কোথাও নেই ঠাঁই, খান ইউনিসে গাজাবাসীর মানবেতর জীবন

৮. আবু আলী মুস্তফা ব্রিগেডস
এটি ফিলিস্তিনের পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) বাহিনীর সশস্ত্র শাখা। তারা পশ্চিম তীর এবং গাজা উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করে। সশস্ত্র দলটির নামকরণ করা হয়েছে নিহত পিএফএলপি নেতা আবু আলী মুস্তফার নামে। যিনি ২০০১ সালে ২৭ আগস্টে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন। আবু আলী মুস্তফার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ২০০১ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলা, রকেট হামলার অভিযান চালায়। 

৯. আবদেল কাদের আল হুসাইনি ব্রিগেড
ফাতাহর আরেকটি সশস্ত্র শাখা ‘আবদেল কাদের আল হুসাইনি ব্রিগেড’। দলের একমাত্র লক্ষ্য ইসরাইলের ধ্বংস। চলমান যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে দলটি হামাস ও ইসলামিক জিহাদি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। 

১০. আল-মুজাহিদিন ব্রিগেড
এটি ফিলিস্তিনি মুজাহিদিন আন্দোলনের সশস্ত্র শাখা। তারা গাজা এবং পশ্চিম তীরে (জেনিনসহ) কাজ করে। ব্রিগেডটি ইসলামিক জিহাদের আল-কুদস ব্রিগেডের সহযোগিতায় কাজ করছে। ফিলিস্তিনি মুজাহিদিন আন্দোলনের মহাসচিব ডক্টর আসাদ আবু শারিয়া। দলটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযানের পুরো প্রস্তুতিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন আল-মুজাহিদিন ব্রিগেডের ফিল্ড কমান্ডার আবু হামজা।