আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০৩ এএম
ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন ২২ বছরের টগবগে তরুণ হামজা। তবে এ নিয়ে হতাশা নয় বরং গর্বিত ফিলিস্তিনি যুবকের মা আজব মৌসা (৪৫)। তিনি জানান, তার কথামতোই ছেলে ইসরায়েলে হামলা করতে গিয়েছিল হামজা। তার কথায়, ‘আমার যদি ১০টি ছেলে থাকত, তাহলে আমি তাদের সবাইকে একই কাজ করতে পাঠাতাম। কারণ, আমাদের নিজেদের ভূমি ফিরে পেতে হবে।’
বার্তা সংস্থা এএফপি ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, গত শনিবার (৭ অক্টোবর) গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। এর দুই দিন পর সোমবার ইসরায়েল সীমান্তে ঢুকে হামলার সময় নিহত হন ফিলিস্তিনি যুবক হামজা। তার মা আজব মৌসা (৪৫) বর্তমানে থাকছেন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বুর্জ আল–শেমালি শহরের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় আজব মৌসার সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি নিজেই ইসরায়েলে হামলা চালানোর জন্য ছেলেকে এগিয়ে যেতে বলেছিলেন। ছেলের মৃত্যুতে তিনি গর্বিত।
ফিলিস্তিনি মা আজব মৌসা বলেন, ‘সে আমাকে বলেছিল যে সে কী করতে যাচ্ছে।...আমি তার পক্ষ নিয়েছিলাম এবং নিশ্চিত করেছিলাম যে সে যেন এই পরিকল্পনা থেকে সরে না আসে।’
২০১১ সালে সিরিয়া থেকে লেবাননে আসে আজব মৌসার পরিবার। তারা কখনো ফিলিস্তিনে থাকেনি। হামজা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার ছোট ভাই ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নন। তবে ভাই যা করেছেন, এমনই কিছু তিনিও করতে চান। ভাইকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করেন।’
আরও পড়ুন: ‘যারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে না, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না’
ফিলিস্তিনে ব্যাপক হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দুই পক্ষে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২০০ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ১৩০০ এবং ফিলিস্তিনে মৃত্যু হয়েছে ১৯০০ জনের। খাদ্য,পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় এবং ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। ইসরায়েল ও গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ৮ম দিনে গড়িয়েছে। ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। এ যেন মৃত্যু আর আতঙ্কের উপত্যকা। আকাশে যুদ্ধবিমানের বিকট শব্দ। চারদিকে বিধ্বস্ত ভবনের ইট-পাথর।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, দেশটিতে ইসরায়েলের বোমা হামলায় আরও সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়া ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ৪৯ জন এবং লেবাননে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের স্থল অভিযানের শঙ্কা, হামাস বলছে তারা ভীত নয়
গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ৪৪৭ শিশু ও ২৪৮ নারী ছাড়াও ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। এছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীরে মৃতের সংখ্যা ৪৯ এ পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি, গত ৭ অক্টোবর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা ইসরায়েলে চার হাজার টন ওজনের অন্তত ৬ হাজার বোমা হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩০০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি ইসরায়েলি।
একে