images

অভিবাসন

ফ্রান্সে খাবার হিসেবে শামুকের কদর বেড়েছে

অভিবাসন ডেস্ক

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৩ এএম

বাংলাদেশের গ্রামে শামুক সাধারণত হাস-মুরগিকে খাওয়ানো হয়। এই জলজ প্রাণিটি ফ্রান্সে খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে শামুক পালন ও খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত করে তোলা হয়। সেরা রাঁধুনীরা শামুকের নানা পদ পরিবেশন করেন। খবর ডয়েচে ভেলের।

ফ্রান্সের বার্গান্ডি অঞ্চলের এই ফার্ম সত্যি বেশ ব্যতিক্রমী। চাষি হিসেবে পেরিন দুদ্যাঁও তাই। তিনি গরু বা ভেড়া নয়, শামুক পালন করেন৷ তার মতে, পুরো ফ্রান্সে, বিশেষ করে বার্গান্ডি অঞ্চলে সেটা একটা ঐতিহ্য।

আরও পড়ুন: কুকুর কোন দেশের জাতীয় পশু?

সত্যি, ফরাসি খাদ্যতালিকায় শামুক অন্যতম সুস্বাদু আকর্ষণ। প্রতি বছর সে দেশের মানুষ প্রায় ২০ হাজার টন শামুক খান৷ কিন্তু ঠিক কোন কারণে শামুকের এমন কদর? কীভাবেই বা সেটা খাওয়া হয়? সেই প্রাণী কীভাবে পালন করা হয়?

sanil

পেরিনের খামারে প্রায় দুই লাখ শামুক রয়েছে। এক ব্রিডারের কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শেখার পর তিনি প্রবল উৎসাহে নিজস্ব ফার্ম খোলেন। 

পেরিন দুদ্যাঁ বলেন, ‘আমার কিন্তু সেই পরিকল্পনা ছিল না৷ আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে কসমেটিক্স ক্ষেত্রে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চলেছিলাম৷ কিন্তু শিশু বয়স থেকে চাষি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তব করতে আমি সেই কোর্স ছেড়ে দিলাম৷’

বর্তমানে তিনি হেলিক্স আস্পের্সা মাক্সিমা প্রজাতির শামুক পালন করেন। বিছুটি পাতাও সামলে চলতে হয়। সেটা শামুকের খোরাক। শামুকের বিষ্ঠার মধ্যে খনিজ পদার্থের কল্যাণে সেখানে বিছুটি গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। কিন্তু প্রকৃতির কোলে শামুক সংগ্রহের বদলে সেই প্রাণীর প্রজননের প্রয়োজন কী? 

পেরিন বলেন, ‘ফ্রান্সে এত বেশি রোমান স্নেল সংগ্রহ করা হয়েছে, যে সেগুলোর সংখ্যা কমেই চলেছে। তাছাড়া সেগুলোর বেড়ে উঠতে তিন বছর সময় লাগে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই প্রাণীর বংশবৃদ্ধি কঠিন হয়ে পড়েছে।’

১৯৭৯ সাল থেকে ফ্রান্সে রোমান স্নেল সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। প্রকৃতির কোলে এমন শামুক সংগ্রহের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ চাপানো হয়েছে। কিন্তু এমন প্রাণী কীভাবে রান্না করা হয়?

smail

পেরিন শামুক সংগ্রহ করে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে কিছু সময়ের জন্য রাখেন। তারপর সেগুলো গরম পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ পেরিন মনে করিয়ে দেন, ‘খোলস থেকে উঁকি দেওয়া শামুক মারা কিন্তু নিষিদ্ধ৷ সেটা পশু পীড়ন হিসেবে গণ্য করা হয়৷’

খোলস থেকে শামুক বের করা হয়। ফলে শুধু মাংস পাওয়া যায়। তারপর শ্লেষ্মা দূর করতে সেগুলো ঝাঁকাতে হয়। পরিষ্কার করতে এবং সম্ভাব্য ব্যাকটিরিয়া দূর করতে সেগুলো সেদ্ধ করতে হয়। সবশেষে মাখন যোগ করতে হয়। তবে সেটা পার্সলে মাখন হতে হবে। এতে করে শামুকের স্বাদ বেড়ে যায়। তবে সেটাই যথেষ্ট নয়৷

পেরিন বলেন, ‘আমি শামুকের খোলসেও অল্প মাখন দিয়ে তার মধ্যে রান্না করা শামুক ভরে দেই। ফলে এমন ঝোল তৈরি হয়, যা মাংসকে বেশি শুকাতে দেয় না। ব্যস, আমার স্নেল শেল প্রস্তুত৷’

পেরিনের ফার্মের দুই ডজন শামুকের দাম ২৩ ইউরো। ফ্রান্সের বেশিরভাগ সুপারমার্কেটেও শামুক কিনতে পাওয়া যায়। ওভেনে রান্না করে বিশেষ এক ধরনের ফর্ক দিয়ে সেটা খেতে হয়।

snail_pic

পেরিন তার উৎপাদনের অর্ধেক সাধারণ ক্রেতা, বাকি অর্ধেক রেস্তোরাঁর কাছে বিক্রি করেন। যেমন শাতো স্যাঁৎ সাবিন নামের পাঁচতারা এক হোটেল তাঁর গ্রাহক। তবে সেই প্রাসাদ-হোটেলের ঘাসের ওপর কোনো শামুক নেই। রেস্তোরাঁর প্রধান রাঁধুনী বঁজামাঁ লিনারের কাছে পেরিনের শামুক পৌঁছে দেওয়া হয়৷ তার হাতে রান্না শামুকের বিশেষ কদর রয়েছে।

রাঁধুনী হিসেবে তিনি শামুকের বেশ কয়েকটি বিশেষ রন্ধন প্রণালী সৃষ্টি করেছেন৷ বঁজামাঁ শামুকের মাংস রাভিওলি হিসেবে সবজি ও ঝোলের সঙ্গে পরিবেশন কর।ন৷ রোমান সাম্রাজ্যেও শামুক খাওয়ার চল ছিল। শামুক বহুকাল দরিদ্র মানুষের খাদ্য হিসেবে পরিচিত ছিল৷ আজ ভূমধ্যসাগর উপকূলের অনেক দেশের খাদ্য তালিকায় শামুক স্থান পেয়েছে। বিশেষ উপলক্ষ্য থাকলে বড় রেস্তোরাঁয়ও শামুক পরিবেশন করা হয়।

তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে

এজেড