images

হেলথ

২০১৯ সালের দিকে যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১০ এএম

করোনা মহামারি সংক্রমণের আগের বছর, ২০১৯ সাল। দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বর। দিনে হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে থাকেন। কয়েক মাস ধরে চলে ডেঙ্গুর এই প্রকোপ। তিন বছর আগের সেই স্মৃতিই যেন মনে করাচ্ছে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত কয়েক দিন ধরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। দিনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চারশ। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্যে জানানো হয়, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এটি চলতি বছর এক দিনে সর্বোচ্চ রোগীর রেকর্ড। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে মোট এক হাজার ৪৮৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৫ জন।

চলতি বছরের শুরু থেকে মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ছিল মশাবাহিত রোগটি। তবে বছরের মাঝামাঝি এসে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রোগটি। বছরের প্রথম পাঁচ মাস সংক্রমণের হার অত্যন্ত কম থাকলেও গত তিন মাসে তা আকাশ ছুঁয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনাও। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণের হার সর্বাধিক। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি রাজধানীর বাইরে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু চিকিৎসার অন্তরায় অতিরিক্ত পরীক্ষা ব্যয়

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি) থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১১ হাজার ১৭৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন নয় হাজার ৬৪৯ জন। এছাড়া চলতি বছরে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন মারা গেছেন।

প্রতি বছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ এ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

dd2

ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে কারণ এখন সময়টাই ডেঙ্গুর। মে-জুন থেকে শুরু করে শীতের আগ পর্যন্ত দেশে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এবার বাড়ার কারণ বৃষ্টিটা ঠিক মতো হচ্ছে না। মাঝে মাঝে হচ্ছে, যা মশার প্রজননে সহায়তা করছে। মশা সৃষ্টির শুরু থেকেই ছিল এবং থাকবে। এটিকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব না। আর মশা থাকলে ডেঙ্গুও থাকবে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সতর্ক হলে রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব।’

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ হয়ে উঠছে কক্সবাজার, ২৩ জনের মৃত্যু

প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ। এটি বাড়ার কারণ মশা বেড়ে গেছে। অর্থাৎ মশা বাড়ার কারণগুলোই ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ার কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। এটি যদি থেকে যায়, তাহলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার সম্ভাবনা আছে। একটানা যদি অনেক বৃষ্টি হয়, তাহলে বাড়বে না। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টি হলে তা বাড়বে। কারণ এতে অল্প পানি জমে। আর এতে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়।’

ডেঙ্গু যেভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে তা সামাল দিকে কী করণীয় এ সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যেহেতু চেষ্টার পরেও ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বাড়ছে তাই হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা উচিত। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে একটা বড় অংশ শিশু। ভর্তির সাথে সাথে তাদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। হাসপাতালে আসা রোগীদের যেন দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়, কোনো ধরনের অবহেলা না থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। এটি একটি জরুরি পরিস্থিতি। এটি মূলত শহর কেন্দ্রিক। তাই সেসব এলাকায় প্রাদুর্ভাব বেশি, সেসব এলাকার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহানুভুতিশীল হতে হবে।’

জেবি