জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ পিএম
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১০ সালে। ১৯৯৪ সালে এসে কোম্পানি আইনের ২৮ ধারার অধীনে নিবন্ধিত হয় বিপিএমসিএ। বর্তমানে এর কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে এম এ মুবিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন।
নিয়মানুযায়ী, প্রত্যেক প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের পক্ষে ২ জন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন। অ্যাসোসিয়েশনের মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেলস্ অব অ্যাসোসিয়েশনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার্যনির্বাহী কমিটির উপর ন্যস্ত থাকবে। তবে এবার নির্বাচন করা নিয়ে সময়ক্ষেপণ ও মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ও ১৯৯৪ সালের বাণিজ্যিক সংগঠন বিধিমালা অনুসারে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর। কিন্তু বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি গত ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখায় কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শর্তসাপেক্ষে ২ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন মাস বৃদ্ধি করে।
তবে মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও সেখানে দ্রুত নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যদিও গত ২৫ অক্টোবর ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলে বেশ কিছু অসঙ্গতির অভিযোগ করছেন খোদ সংগঠনের সদস্যরা। তারা বলছেন, তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে নমিনেশন পেপার বিতরণের আগেই জমা দেওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া তফসিল অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও এখনো নির্বাচনী বোর্ড চূড়ান্ত ভোটার তালিকা সরবরাহ করতে পারেনি। অন্যদিকে ২০ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও অদ্যাবধি তা প্রকাশ করা হয়নি। যদিও আগামী ১৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ করা হবে তফসিলে বলা হয়েছে। ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর সদস্যদের মধ্যে। সেইসাথে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে।
তবে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে বিপিএমসিএ-এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া সব কিছু মেনে হচ্ছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও বিপিএমসিএ-এর নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী এ নিয়ে কাজ করছেন।
এদিকে আগামী ১০ জানুয়ারি বিপিএমসিএ’র সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের ডাকা সভার আলোচ্যসূচীতে ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে ২ বছরের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন হলে ১০ জানুয়ারি বার্ষিক সাধারণ সভায় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কিভাবে সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিএমসিএ’র এক সদস্য জানান, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ছলচাতুরি শুরু করেছে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। এজন্যই নির্বাচনী তফসিলে ইচ্ছাকৃতভাবেই অসংগতি সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বাতিল করে সিলেকশনের মাধ্যমে বর্তমান সভাপতির পছন্দের কাউকে শীর্ষপদে বসাতে বিভিন্ন মহলে জোর তদবিরের অভিযোগ উঠেছে। এজন্যই মূলত সাধারণ সভার মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: অটোমেশনে ভর্তি: বেসরকারি মেডিকেলে পড়ায় আগ্রহ কমছে শিক্ষার্থীদের
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়নি। ওইদিন সাধারণ সভায় বিগত দুই বছরের আয়-ব্যয় ও কার্যক্রমের হিসেব সদস্যদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। পরে বিশেষ অধিবেশন হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কমিটি হওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব পুলক কুমার মন্ডলকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিইউ/এফএ