নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও ট্রান্সফ্যাট ঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে উল্লেখ করে ‘খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১’ দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন জরুরি বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ট্রান্সফ্যাটমুক্ত নিরাপদ খাদ্য ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
আলোচকরা বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যদ্রব্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট অনিরাপদ এবং এটি হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও), যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ, সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহৃত হয়। ট্রান্সফ্যাট ঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।
সরকার ‘খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১’ পাশ করলেও এখনও তা পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন শুরু করতে পারেনি উল্লেখ করে প্রবিধানমালাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে জানান তারা।
তারা জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ট্রান্সফ্যাট এলিমিনেশন প্রতিবেদন অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের ৪৩টি দেশ ইতোমধ্যে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ‘সর্বোত্তম নীতি’ বাস্তবায়ন করলেও, বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে।
ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, সম্প্রতি একটি গবেষণায় বোতলজাত সয়াবিন তেলে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএফএসএ এবং বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় চিহ্নিত করার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) ড. মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, ভোজ্যতেলে ট্রান্সফ্যাট কমিয়ে আনার ওপর আমরা বিশেষভাবে জোর দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করে খুব দ্রুতই আমরা সমাধানে পৌঁছাব।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার বলেন, প্রবিধানমালার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে অকাল মৃত্যু কমাতে প্রবিধানমালার বাস্তবায়ন জরুরি।
ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন। এই আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সমৃদ্ধি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’।
এমএইচ/এমএইচএম