রাফিউজ্জামান রাফি
১৫ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৩২ পিএম
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মানাম আহমেদ। ব্যান্ডের জৌলুর ফিকে হয়েছে— এটা মানতে নারাজ বরেণ্য এই ব্যান্ড ব্যাক্তিত্ব। তিনি মনে করেন, ব্যান্ড সংগীতের রাজত্ব আগের মতোই আছে। গিটারের ছয় তারের ঝংকার যেন রক্তে নাচন তোলে। ত্রিশে পা রাখা যুবকের মনেও আঠারো নেমে আসে। এ দেশের সংগীতে ব্যান্ডের গান ভীষণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল আশি-নব্বইয়ের দশকে। হাটে-মাঠে-ঘাটে বানের জলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। ব্যান্ড সংগীতে তরুণরা এতটাই প্রভাবিত ছিল যে, তাদের ফ্যাশনেও পড়েছিল সেই প্রভাব।

সেদিন আর নেই। একাবিংশ শতকের শুরুতেই ঝিমিয়ে পড়ে ব্যান্ডগুলো। নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, জেমসরা ব্যান্ড সংগীত দিয়ে দেশের সকল শ্রেণির মানুষের মনে টোকা দিলেও তাদের উত্তরসূরিরা সেই ধারা ধরে রাখতে পারেননি। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়া ব্যান্ডের সেই জৌলুস আজ চোখে পড়ে না। এর কারণ খুঁজতে ঢাকা মেইল কথা বলেছে দেশের অন্যতম ব্যান্ড ব্যাক্তিত্বদের কয়েকজনের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বিকিনিতে উদ্দাম নাচ নোরার
ব্যান্ড সংগীত রচিয়তাদের মধ্যে অন্যতম গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। দেশের ব্যান্ড কী কারণে সেই জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ হলো— ব্যান্ডের স্বর্ণযুগ যারা এনেছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এখন নতুন গান সৃষ্টি করা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। এখনও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের সৃষ্টি বিমুখতা ব্যান্ডের ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে।’
নতুন ব্যান্ডগুলো আগের মতো সাড়া জাগাতে পারছে না কেন— প্রশ্নটির উত্তরে এই গীতিকবি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক ব্যান্ডই ভালো করছে। তবে তাদের আরও পরিশ্রম করা দরকার। মোট কথা মেধা ও পরিশ্রমের সমন্বয় হতে হবে। তবেই হারানো জৌলুস ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

একই প্রশ্নের উত্তরে একসময়ের সাড়া জাগানো ব্যান্ড তারকা হাসান জানান, এর পেছনে পর্যাপ্ত সাধনা ও সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় আমরা যেভাবে করেছি এখন হয়তো সেভাবে করে না সবাই। আমাদের সাধনার একটা ব্যাপার ছিল, চর্চা হতো। সবচেয়ে বড় কথা তখন অডিও ইন্ডাস্ট্রির বিশাল একটা বাজার ছিল। একটা প্রতিযোগিতা ছিল, অনেক গান হতো। কিন্তু এখন অডিওর সেই বাজারটা নেই। পেশাগতভাবে গানগুলোর পেছনে লগ্নি করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিযোগিতাও আগের মতো নেই। এসব কারণেই হয়তো আগের মতো ব্যান্ডের রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। তা ছাড়া অডিও বাজার ধ্বংস হওয়ার কারণে নতুন ব্যান্ডগুলোও পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছে না। তাই সেই সময়টাও ফিরে আসছে না।’
আরও পড়ুন: দুই ষড়যন্ত্রকারীর মধ্যে একজন প্রযোজকও আছেন
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মানাম আহমেদ। ব্যান্ডের জৌলুস ফিকে হয়েছে— এটা মানতে নারাজ বরেণ্য এই ব্যান্ড ব্যাক্তিত্ব। তিনি মনে করেন, ব্যান্ড সংগীতের রাজত্ব আগের মতোই আছে।

এ প্রসঙ্গে মানাম আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় না ব্যান্ড তার জৌলুস হারিয়েছে। ব্যান্ড সংগীত স্তিমিত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ আমি বলতে পারি, দেশে এখনও যে বড় কনসার্টগুলো হয় সেখানে ওই ব্যান্ডগুলোরই কিন্তু রাজত্ব। এভাবে বললে অন্যদের ছোট করা হয়। কিন্তু এটাই সত্য। যেকোনো ব্যান্ড তার একটি শো ফুল হাউজ করে ফেলতে পারছে যা অন্যরা পারছে না। এটাই হচ্ছে ব্যান্ডের শক্তি। আর আপনি যে দশকই বলেন না কেন, দেশে লাইভ পারফর্মার বলতে কিন্তু ওই ব্যান্ডগুলোই। অন্যরা কিন্তু এই বিষয়ে ব্যান্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারবে না। হ্যাঁ, দেখা যায় এখন অনেক কারণে বিভিন্ন সময় হল পাওয়া যায় না। অনুষ্ঠান করা যায় না। কিন্তু এটা তো অর্গানাইজারদের কাজ। ব্যান্ডের না কিন্তু।’

এ সময় মানাম আহমেদ জানান, করোনা মহামারির পরেও যে কয়েকটি বড় শো হয়েছে তার সবই ব্যান্ডগুলো করেছে। এই উদাহরণ থেকে মাইলসের এই সদস্য মনে করেন ব্যান্ডের জৌলুস মোটেও ফিকে হয়নি।
আরআর/আরএসও