images

বিনোদন

‘গঙ্গায় স্নান করে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তাম’

বিনোদন ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম

ব্রিটিশ ভারতে বিহারের বক্সার জেলার ডুমরাওঁ গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম সুরসম্রাট বিসমিল্লাহ্ খানের। জন্মসূত্রে তার নাম কামরুদ্দিন। তিনি জন্মগ্রহণের পর তার দাদা বলে ওঠেন ‘বিসমিল্লা!’ সেই থেকেই তিনি ‘বিসমিল্লা’ নামে পরিচিত।  

মাত্র ৬ বছর বয়সে বিহার থেকে বারাণসীতে চলে এসেছিলেন। মামা আলি বক্স বিলায়েতু খান ছিলেন কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাইবাদক। তাঁর কাছেই সানাই বাজানো শেখেন বিসমিল্লা খান। মামার সঙ্গে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কিশোর সানাইবাদক হিসেবে ‘ইলাহাবাদ মিউজিক কনফারেন্স’-এ যান কিংবদন্তি এ বাদ্য শিল্পী। 

রোজ সকালে গঙ্গায় স্নান গোসল করে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। তারপর সন্ধ্যা নামতেই বালাজি মন্দিরের চাতালে রেওয়াজ শুরু করতেন। মহরমের দিন ছাড়া কখনও দাঁড়িয়ে সানাই বাজাতেন না। বছরে ওই এক দিন তিনি রাস্তায় বেরিয়ে কোনো রাগ বাজাতেন না, বাজাতেন বিলাতগীতি নৌহা । প্রতিটি অনুষ্ঠানে ‘রঘুপতি রাঘব’ অবধারিত ছিল।  

Bismilla_g

রাধাকৃষ্ণের লীলা পরিবেশন করতে করতে তিনি বলতেন, ‘সানাই বাজাতে বাজাতে মনটা আমার বৃন্দাবনে চলে যায়।’ সংগীত, সুরের সেই পরিবেশন তখন আর শুধু পারফরম্যান্স থাকত না, হয়ে উঠত মানবদর্শন। শৈশবের কথা বলতে গিয়ে বলতেন, ‘প্রতিদিন ভোরবেলা গঙ্গায় স্নান করে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তাম। তারপর বালাজি মন্দিরে গিয়ে সারাদিন সানাই বাজাতাম। কই, কোনোদিন তো অসুবিধা হয়নি।’

স্বাধীনতার পর প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবস। জওহরলাল নেহেরু ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করলেন প্রজাতন্ত্র দিবসের পদযাত্রায় সানাই বাজানোর জন্য। প্রথমেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘একমাত্র মহরমের দিন ছাড়া আমি দাঁড়িয়ে সানাই বাজাই না।’ নেহেরু দিনটির গুরুত্ব বুঝিয়ে আবার অনুরোধ করায় রাজি হলেন। খাঁ সাহেব ভাবনায় পড়লেন, কী বাজানো যায়! হঠাৎ বেনারসের ঘাটে মাঝিদের গানের সুর কানে এল। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেললেন কী সুর বাজাবেন। সেদিন বাজালেন ‘গঙ্গা দুয়ারে বানাইয়া বাজে’। সানাইয়ের সুরে দেশবাসীর কাছে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের মেঠো সুর পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

bismillagf

সুরসম্রাট বিসমিল্লাহ্ খান ২০০৬ সালের ২১শে আগস্ট ৯২ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর প্রয়াণে একদিন জাতীয় শোক ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে বারাণসীর ফতেহমান কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। বিসমিল্লার সঙ্গে মাটি দেওয়া হয়েছিল তাঁর প্রিয় সানাইকেও। তিনি নিজে বলতেন, ‘বিভিন্ন ঘরানা থেকে ফুল তুলে এনে আমার সানাইয়ে ভরে দিই। তৈরি হয় গুলদস্তা।’

ইএইচ/