উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের পুরোধা পুরুষ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান। যিনি সানাইকে উচ্চাঙ্গ সংগীত বাদনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনি তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ভারতরত্ন পদক পেয়েছেন। পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রীরসহ ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে সম্মানিত হয়েছেন।
শুধু ভারত নয় আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, হংকংসহ ইউরোপের দেশগুলোতে উচ্চাঙ্গ সংগীত ছড়িয়ে দিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। নাম যশ খ্যাতি সত্ত্বেও সাধারণ জীবনযাপন করতেন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান। সাইকেল কিংবা রিকশাই ছিল তার চলাচলের মূল বাহন। তিনি বিশ্বাস করতেন সঙ্গীত শোনার বিষয়, দেখার বা দেখাবার নয়।
বিজ্ঞাপন

কিংবদন্তি সানাই বাদক ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান ১৯১৬ সালের ২১ মার্চ বিহারের বক্সারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গীত গুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বকস্ বিলায়াতু। যিনি বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক ছিলেন।
১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন তিনি। ১৯৫০ সালের দিল্লীর লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিসমিল্লাহ খানের পরিবেশনা মুগ্ধ করেছিল ভারতবর্ষকে।
শুধু সানাই বাজিয়েছেন তা কিন্ত নয়। চলচ্চিত্রেও দেখা গিয়েছিল, তবে সেটি দীর্ঘ হয়। ‘সনাদি অপন্যা’ চলচ্চিত্রের ডা: রাজকুমার চরিত্রের জন্য সানাই বাজিয়েছিলেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গুঞ্জে উঠে সানাইয়ের অংশে সানাই বাজিয়েছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন

ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের জীবন এবং কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র ‘সঙ্গ মিল সে মুলাকাত’ নির্মাণ করেছিলেন শক্তিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ। এতে ওস্তাদ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। বিজয় ভাট পরিচালিত দক্ষিণি সিনেমা ‘সানাদি আপ্পান্না’তে সানাইবাদক আপ্পান্নার জীবনের চলচ্চিত্রায়নের নেপথ্যে সানাই বাজাতে দেখা গিয়েছিল বিসমিল্লা খানকে।
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট বারাণসীর হেরিটেজ হসপিটালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওস্তাদ বিসমিল্লা খান মৃত্যুবরণ করেন। আজ সানাই সম্রাট ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান চলে যাওয়ার ১৯ বছর। তাঁর মৃত্যুতে ভারত সরকার একদিন জাতীয় শোক পালন করেছিল।
ইএইচ/

