বিনোদন ডেস্ক
২৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
জুলাই মাস এলে স্মরণে করতে হয় বরেণ্য দুই সঙ্গীতজ্ঞকে। একজন ফিরোজা বেগম, অন্যজন কমল দাশগুপ্ত। কমল ছিলেন ফিরোজা বেগমের স্বামী। বিয়ের আগে হিন্দু ধর্মের অনুসারী ছিলেন তিনি। তবে বিয়ের চার বছর পর ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হন। জীবনের শুরুটা রাজকীয়ভাবে কাটলেও জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো মোটেও সুখকর ছিল না।
ফিরোজা বেগমকে যখন বিয়ে করেন কমল দাশ তখন তাঁদের বয়সের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফিরোজার থেকে ঠিক ১৮ বছরের বড়ো কমল। বিয়ের সময় কমলের বয়স তখন ৪৩। কিন্তু এসব কোনোকিছুই তাঁদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ফিরোজা বেগমের সঙ্গে সম্পর্কের আগে শিক্ষার্থী যূথিকার কাছে প্রত্যাখ্যাত হন কমল।
বাবা-মা, ভাই ও দাদার মৃত্যুতে দিশেহার হয়ে পড়েন উপমহাদেশে প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্ত। ফিরোজা তখন কলকাতায় তাঁর দিদির বাড়িতে চরম অত্যাচারের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে কমল দাশগুপ্তের জীবনেও প্রয়োজন ছিল একটি নিশ্চিত আশ্রয়। আর ঠিক তখনই এসে হাত ধরল ফিরোজা। যার টানে সুরের মহারাজা হলেন পথের ভিখারি।
অল্পদিনের সম্পর্কে ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ফিরোজা বেগমের। তখনও দুজনের ধর্ম আলাদা। বিয়ের চার বছর পর ১৯৫৯ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন কমল। তখন তাঁর পরিচয় হল কামাল উদ্দিন। বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ক্যারিয়ারের ঊর্ধ্বগামী গ্রাফ একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে কমলের।
সে সময় কলকাতায় অনেক সুরকার জন্ম নিয়েছে। নতুন সুরকার দিয়ে কাজ করাছেন প্রযোজক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে কাজ কমতে থাকে কমলের। তাছাড়া নাথ ব্যাঙ্ক ভরাডুবি হওয়ায় সমস্ত সঞ্চয়ও খুইয়েছেন। অন্যদিকে ফিরোজার তখন গগনচুম্বী খ্যাতি। কমল ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন ফিরোজার খ্যাতির আড়ালে।
যে কমল দাশগুপ্ত ১৯৪৬ সালে ৩৭ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছেন। গাড়ি ছাড়া পা রাখেননি কলকাতার রাস্তায়। সেই কমল দেউলিয়া হয়ে ১৯৬৭ সালে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। হাতে কোনো কাজ না থাকায় ঢাকাতে একটি মুদিখানার দোকান খোলেন। আর্থিক ও মানসিকভাবে কমল দাশগুপ্ত তখন চরমভাবে বিপর্যস্ত।
দেশে স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’ পত্রিকার প্রতিবেদনে তাঁর দুরবস্থার কথা প্রকাশিত হয়। তারপর বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার ও সংগীতশিল্পী শহীদুল ইসলামের চেষ্ঠায় বেতারে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস বিভাগে প্রধান সংগীত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর স্রোতে ফিরতে পারেননি। দীর্ঘদিনের অনিয়মে শরীর ততদিনে ভেঙে পড়েছে।
কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। তারপর আর উঠলেন না। ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি। অন্যদিকে কিডনি জটিলতায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি।
দুই সংগীতজ্ঞের মনের মিল যেমন ছিল। তেমন জন্মেদিনের তারিখেও রয়েছে মিল । ১৯৩০ সালে ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজা বেগম। অন্যদিকে কমল দাশগুপ্তের জন্ম ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই।
এ দম্পতির তিন পুত্র তাহসিন আহমেদ,হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ। গত বছর ২৪ জুলাই মারা গেছেন শাফিন আহমেদ।
ইএইচ/