বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩১ এএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। অর্নাস ও মাস্টার্স-উভয় পর্যায়ে ন্যূনতম ৩.৭৫ সিজিপিএ শর্ত থাকায় প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে নিজেদের বিভাগেই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পূর্বে শিক্ষক নিয়োগে অর্নাস অথবা মাস্টার্স-যেকোনো একটিতে ৩.৭৫ সিজিপিএ থাকলেই আবেদন করা যেত। তবে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীতিমালা সংশোধন করে অর্নাস ও মাস্টার্স উভয় পর্যায়ে কমপক্ষে ৩.৭৫ সিজিপিএ বাধ্যতামূলক করে। কিন্তু বিভাগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি ব্যাচ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও কেউই সম্মিলিতভাবে এই মানদণ্ড পূরণ করতে পারেননি। ফলে শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করার সুযোগ থেকেই বাদ পড়ছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিজ বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা আবেদন করতে না পারায় বিভাগে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক নিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। এতে বিভাগের একাডেমিক ধারাবাহিকতা ও গবেষণাভিত্তিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
আরও পড়ুন: ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ
বিভাগের এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যখন ভর্তি হয়েছিলাম, তখন বিভাগটি নতুন ছিল। পর্যাপ্ত শিক্ষক ছিলেন না, কোর্স কাঠামোও ছিল সীমিত। সেই বাস্তবতার মধ্যেই আমাদের পড়াশোনা শেষ করতে হয়েছে। এখন সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করে এমন সিজিপিএ শর্ত আরোপ করা হলে আমরা কীভাবে শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করব?’
বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকাংশ বিভাগে উচ্চ সিজিপিএ অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। অথচ শিক্ষক নিয়োগে অর্নাস ও মাস্টার্সে ন্যূনতম ৩.৭৫ সিজিপিএ শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অনেক শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৩.৪৯-এ আটকে যাওয়ায় তারা শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করার সুযোগ হারাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অযৌক্তিক মানদণ্ডের কারণে সামাজিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে সাংবাদিকতা বিভাগের মেধাবী গ্র্যাজুয়েটরা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ছেন। আমরা শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫০ নির্ধারণ করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: বিয়ে করলেন ডাকসু নেত্রী সানজিদা
এ বিষয়ে বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি যতটা টান অনুভব করেন, অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তা অনুভব করেন না। ফলে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেলে দায়িত্ববোধের পাশাপাশি ওই শিক্ষাঙ্গণের নিজস্ব আঙ্গিকে শিক্ষাদানের সুযোগ তৈরি হয়। নিজের শিক্ষাজীবনের নানা অপ্রাপ্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতাগুলো সহজেই চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষাদানের সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো জবির শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য পান না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আমলে নিয়েছি এবং এ নিয়ে কাজ করছি।’
এমআই