images

শিক্ষা

টেন্ডার বাতিলে ধাক্কা, জানুয়ারিতে বই বিতরণে অনিশ্চয়তা

মো. আব্দুস সবুর (লোটাস)

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৭ এএম

শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বিনামূল্যে পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে চলতি বছরের শুরুতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। টেন্ডার অনুমোদনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ‘অদৃশ্য প্রভাবে’ ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার দরপত্র বাতিল করে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ফলে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

দরপত্র বাতিলের বিষয়টি নিয়ে এনসিটিবি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি। তবে এনসিটিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “দরপত্র মানেই অর্থনৈতিক লেনদেন-তাই সেখানে অদৃশ্য প্রভাব থাকতেই পারে।” অন্যদিকে, এনসিটিবির চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, পুনরায় টেন্ডার হলেও নির্ধারিত সময়েই শিক্ষার্থীরা বই পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার প্রাথমিক স্তরের প্রায় ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বই প্রয়োজন হবে। সে অনুসারে দরপত্রের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল এনসিটিবি। কিন্তু সম্প্রতি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্র বাতিল করা হয়। তবে কী কারণে তা বাতিল করা হয়, এনসিটিবিকে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণির ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮। এর মধ্যে ২৮০টি লটের মধ্যে ১১ কোটির বেশি বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হয়েছে।

এসব শ্রেণির বই ছাপানোয় আন্তর্জাতিক দরপত্রের একটি খবর শোনা গেলেও সেটি সঠিক নয় বলে জানায় এনসিটিবি। তবে এ নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিং উইং।

3

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দরপত্রের কোনো কিছুই সেভাবে পরিবর্তন করা হয়নি। আগের দরপত্রই শুধু পুনঃদরপত্র হিসেবে প্রকাশ করতে বলেছে মন্ত্রণালয়।

তিনি আরও বলেন, যেখানে দরপত্র সেখানেই অর্থনৈতিক একটা ব্যাপার জড়িত থাকে। ফলে সেটির কোনো অদৃশ্য প্রভাব থাকতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ও সিন্ডিকেট ভাঙ্গার যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলোও খুব বেশি সঠিক নয়। কারণ ওপেন দরপত্র আহ্বান করার পর যে সবচেয়ে কমে কাজ করে দেবে তাকেই নিয়ম অনুসারে কাজ দিতে হবে। এখানে দল-মত দেখার কোনো কিছু নেই। আর সিন্ডিকেটের কোন দল থাকে না বরং তারা স্বার্থ বুঝেই দল করে।

যে কারণে টেন্ডার বাতিল

১৯ আগস্টের সভায় ক্রয়াদেশ অনুমোদন না দিয়ে টেন্ডার বাতিল করা হলেও তা এনসিটিবিকে জানানো হয় ২ সেপ্টেম্বর। তবে তাতে টেন্ডার বাতিলের সুনির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি। শুধু পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার কথা বলা হয়েছে।

তবে জানা যায়, এনসিটিবিতে জমা পড়া টেন্ডার মূল্যায়নে যারা বই ছাপার কাজ পেয়েছিলেন, তাদের অনেকে আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সরাসরি জড়িত। তারা সিন্ডিকেট করেছে বলেও গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এসব কারণে তিনটি শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অনুমোদন না দিয়ে তা বাতিল করা হয়।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত ভালো হয়েছে। কারণ একটি আইপি থেকে অনেকগুলো টেন্ডার জমা পড়েছিল। আগে সক্ষমতা দেখে কাজ দেওয়া হতো কিন্তু বিগত সরকারের সময়ে এসব না মেনে দলীয় লোকজনরা কাজ পেয়ে যেতো। ফলে তাদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছিল। যেটা ভাঙা খুবই দরকার ছিল। এটি না হলে ছোট ও মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠানরা কাজ পাবে না।

4

পুনরায় দরপত্র প্রকাশ, পেছাবে বই ছাপার কাজ

তিন শ্রেণির বই ছাপাতে এনসিটিবিকে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। চলতি মাসের ৪ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে দরপত্র আহ্বানও করেছে এনসিটিবি। আবেদন জমা নেওয়া, মূল্যায়ন, প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাই, ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটিতে পাঠানো এবং অনুমোদন, চুক্তিসহ নানা কাজ শেষ করতেই প্রায় তিন মাস লাগবে। আর চুক্তির পর বই ছাপাতে ছাপাখানার মালিকরা ৭০ দিন সময় পাবেন।

অর্থাৎ পুনরায় টেন্ডারে খাতা-কলমে সময় লাগবে পাঁচ মাস। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে। ফলে ষষ্ঠ-সপ্তম-অষ্টমের শিক্ষার্থীদের বই পেতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এতে জানুয়ারির পরিবর্তে শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে হবে এপ্রিলে। কারণ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোজা ও ঈদের ছুটি থাকবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, পাঠদান শুরু করতে শিক্ষার্থীদের হাতে অবশ্যই পাঠ্যবই পৌঁছানো জরুরি। এবার ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরু। রোজা ও ঈদের লম্বা ছুটি থাকবে। তার আগে শিক্ষার্থীরা বই হাতে পেলে বাড়িতেও পড়ার সুযোগ পাবে। আশা করি, এনসিটিবি জানুয়ারিতেই বই পৌঁছে দেবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী বলেন, সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে পুনরায় টেন্ডার হলেও কাজ শেষ করতে দেরি হবে না। আশা করছি শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়েই বই পাবে।

এএসএল/এমআর