নিজস্ব প্রতিবেদক
০৭ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫৭ পিএম
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহ। বাজারে তালিকা ধরে কাঙ্ক্ষিত কাঁচাপণ্য কেনা শেষে মুদি দোকানে সয়াবিন তেলের দাম জানতে চাইলেন। দোকানি জানালেন, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯২ টাকা। আশপাশের আরও দুটি দোকানে খোঁজ নিলেন। সবখানে একই দাম হাঁকা হচ্ছে। অথচ সম্প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমানোর পর দাম হওয়ার কথা ১৭৮ টাকা।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সকালে বাড্ডার একটি বাজারে আবু জাফর ওবায়েদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, পত্রিকা পড়ে জেনেছি তেলের দাম কমেছে। পরিকল্পনা ছিল ৫-৭ লিটার তেল নিয়ে রাখবো সারা মাসের জন্য। কিন্তু বাজারে এসে দেখি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
ক্ষোভ জানিয়ে এই ক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর সময় তো ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে। বাড়তি দামের তুলনায় সামান্য দাম কমানো হলেও এখন আইন করেও সাধারণ মানুষ তেল পাচ্ছে না নতুন দামে। এই দায় নেওয়ার কি কেউ নেই?’
আরও পড়ুন: সবজির বাজারে আগুন
গত সোমবার (৩ অক্টোবর) সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা কমানো হয়েছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭৮ টাকা। যা মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। অথচ চার দিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে কমেনি সয়াবিনের দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ হয়েছে বিষয়টি তারা জানেন। কিন্তু দোকানে আগের বাড়তি দামে কেনা পণ্য থাকায় নতুন দামে বিক্রি করতে পারছেন না তারা। এছাড়া নতুন দামের পণ্য এখনও এসে পৌঁছায়নি বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। যদিও তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর তাদের কেউই নতুন পণ্য আসার পর দাম কার্যকরের কথা বলেন না।

ঢাকা মেইলের অনুসন্ধান বলছে, অনেক দোকানে নতুন দামে কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করলেও দোকানিরা কৌশলী হয়ে পুরনো তেলের বোতলগুলো আগে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে দোকানিদের মধ্যে অঘোষিত সিন্ডিকেট রয়েছে।
মেরুল বাড্ডার স্থানীয় আম্মাজান জেনারেল স্টোরের দোকানি ছগির আহম্মেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ক্রেতারাতো টেলিভিশন দেখেই আমাদের কাছে বলেন দাম কমেছে। কিন্তু তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তো আর প্রতিদিন আসে না। সপ্তাহে হয়তো একবার আসে, কোনো কোনো সপ্তাহে আসেও না। দোকানে গত সপ্তাহের তেল রয়েছে, সেগুলো বিক্রি না করে, লস দিয়ে নতুন তেল বিক্রি কারার তো সুয়োগ নেই।’
একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরপুল বাজারে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, দুই লিটার ৩৮০ টাকা, পাঁচ লিটার ৯৪৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল কেজি ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে নতুন দাম নির্ধারণের চার দিন পরও মাশুল দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হতেও দেখা গেছে। ক্রেতাদের দাবি, জিম্মি করেই তাদের থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা।
ডিএইচডি/জেবি