নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৪ এএম
শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় বাজারে একে একে উঠতে শুরু করেছে মৌসুমি সবজি। ফুলকপি, শিম, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ঝিঙা, গাজর-সবই এখন সাজানো রয়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। কিন্তু এই প্রাচুর্যের মাঝেও কমেনি দামের চাপ। বরং অনেক সবজিই বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি দামে, যা ভোক্তাদের জন্য বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম এখনো ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মূলা ও পেঁপে অপেক্ষাকৃত কম দামে মিললেও বাকি সব সবজিতেই চড়াভাব স্পষ্ট। মাঝারি সাইজের ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বেগুন, গাজর, শসা, কাঁচা মরিচ, নতুন আলু-সবই বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ঝিঙা ও শিমের দামও কমেনি। বরবটি ও করলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ঘরে, যা শীত মৌসুমের হিসেবে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ক্রেতারা।
বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতারা এ পরিস্থিতিতে হতাশ। শান্তিনগর বাজারে রাহিম হোসেন নামের এক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, শীত আসলে সবজির দাম কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু এবার উল্টো।
![]()
আরও পড়ুন: এই ৩ সবজির খোসা পুষ্টির খনি
তিনি জানান, আগে যেসব সবজি এক কেজি করে কিনতেন, এখন দাম বেশি হওয়ায় অর্ধেক পরিমাণ কিনতে হচ্ছে। পরিবারের বাজেট সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, তাদের হাতেও আসছে কম দামে সবজি না। মালিবাগ বাজারের সবজি ব্যবসায়ী এরশাদ আলী জানান, পাইকারি বাজারেই সরবরাহ কম, ফলে তারা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সরবরাহ বাড়লে দাম স্বাভাবিক হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
যাত্রাবাড়ী আড়তের সবজি বিক্রেতা নাঈম আহমেদ ঢাকা মেইলকে জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের গাছ নষ্ট হয়েছে। অনেক জায়গায় শিম, বেগুন, ঝিঙা ও অন্যান্য সবজির ক্ষতি হয়েছে। ফলন কমে যাওয়ায় বাজারে সবজি তুলনামূলক কম উঠছে।
আরও পড়ুন: দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে এই সবজি খান
তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি ট্রাক থেকে সবজি বাজারে এসে কয়েক ধাপে হাতবদল হয়। প্রতিটি ধাপেই কিছুটা করে দাম বাড়ে, ফলে খুচরা পর্যায়ে এসে দাম আরও বেড়ে যায়।’
সবজি কিনতে আসা মানিক হোসেন বলেন, ‘শীতের আগে সবজির যে দাম ছিল সে সময়ের অস্বস্তি এখন আর নেই। দাম অনেকটাই কমে এসেছে। তবে এখনো বেশিরভাগ সবজির দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মৌসুমি সবজি উঠলেও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা ও নির্বিঘ্ন সরবরাহ না থাকলে দাম কমতে সময় লাগে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ক্ষেতের ফলনের ক্ষতি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য মিলিয়ে এই মৌসুমেও ভোক্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: কোন সবজি সবচেয়ে উপকারী?
সরকারি পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে দাম কমতে পারে।
শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম এখনো চড়া, আর এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের বাজেটের চাপই বেড়ে চলেছে। সরবরাহ বাড়া এবং বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তির সম্ভাবনা সীমিত বলেই মনে করছেন সবাই।
শীতের শুরুতেই সবজির বাজার চড়া থাকায় ক্রেতাদের খরচ বেড়ে গেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই উচ্চমূল্যের চাপই বয়ে বেড়াতে হবে ভোক্তাদের।
এমআর/এমআই