নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৬ পিএম
রাজধানীর বাজারে গত এক বছরে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন না আসায় সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে বাড়ছে অস্বস্তি। আয় না বাড়লেও উচ্চমূল্যের কারণে আর্থিক চাপে পড়ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। অধিকাংশ পরিবার গরু ও খাসির মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছেন ব্রয়লার মুরগির মাংস দিয়ে। ফলে গরুর মাংস কিনতে হাঁসফাঁস খেতে হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের।
গরু ও খাসির মাংসের অপরিবর্তিত চড়া দামে সপ্তাহে একদিন তো দূরের কথা, অনেক পরিবার মাসেও একবার মাংস কিনতে পারছে না। ক্রমবর্ধমান নিত্যপণ্যের দামের চাপে দৈনন্দিন বাজেট সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত মাংস খেলে যেসব বিপদ হতে পারে
ক্রেতাদের অভিযোগ, নিত্যপণ্যের তুলনায় মাংসের বাজার অনেক বেশি স্থবির। মাংসের বাজার নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। দাম কমার কোনো প্রবণতা নেই, বরং প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে গেলেই পড়তে হচ্ছে অতিরিক্ত চাপের মুখে।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ ও মিরপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানভেদে দামে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও চড়া দামই প্রধান সমস্যা। অনেক ক্রেতা মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর খাসির মাংসের দাম ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকার নিচে নামছে না। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার বাজারে ভিড় থাকলেও মাংসের দোকানগুলোতে তেমন ভিড় নেই।
বিক্রেতারা বলছেন, গোখাদ্য, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ না কমায় তাদের ক্ষেত্রেও দাম কমানোর সুযোগ নেই। আমরাও চাই দাম একটু কম হোক। কিন্তু যেভাবে খরচ বাড়ছে, সেখানে আগের দামে বিক্রি করাই কঠিন।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, আমদানির চাপ কমে যাওয়া, জ্বালানির মূল্য অস্থিরতা এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মাংসের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না। বিশেষ করে খাসির মাংসের চাহিদা উৎসব ছাড়া কমলেও দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেই।
ধানমন্ডির বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর ধরে বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম একই। গেল ১ বছরে সরকার মাংসের দর নিয়ন্ত্রণ কিংবা কমাতে পারেনি। বাজারে আসলে মনে হয় আগের চেয়ে চাপ বাড়ছে। সপ্তাহে একদিন মাংস কিনতে গেলেও হিসাব কষতে কষ্ট হয়।’
আরও পড়ুন: গরুর মাংসের ভর্তা রেসিপি
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে আসলে মধ্যম আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী বাজার করতে হিমশিম খেতে হয়। সবকিছু ঠিকমতো নেওয়া যায় না। আগে মাসে একবার মাংস কিনলেও এখন ৬ মাসে একবার মাংস কিনতে হয়। কারণ, আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাব মেলানো কষ্ট হয়ে যায়।’
হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা ওয়াদুদ আলী বলেন, ‘আগে গরুর মাংস ৫০০ টাকায় কিনেছি। হঠাৎ করে গরুর মাংস একলাফে ৬০০-৭০০ টাকা হওয়ার পর আর এ দাম কমে না। সরকার কতবার উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়নি। সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারেনি। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তাহলে জনগণের পকেট তো যেকোনো সময় কাটবে ব্যবসায়ীরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাংসের দর নিয়ে আমাদের আর কোনো অভিযোগ নেই। কারণ, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। এখন শুধু কোরবানি আসলেই মাংস খাই। এছাড়া, কম দামে মুরগির মাংস দিয়ে গরু ও খাসির মাংসের চাহিদা মেটাই।’
ভোক্তারা মনে করছেন, মাংসের বাজার মনিটরিং আরও কঠোর না হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যটি ক্রমেই ‘অভিজাত’ তালিকায় চলে যাবে। সব মিলিয়ে গরু-খাসির মাংসের চড়া দাম এখন ভোক্তাদের জন্য বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একেএস/এমআই