images

সারাদেশ

নিজ হাতে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষা সনদ লিখেছেন ইবির মনিরুল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০০ পিএম

সনদপত্র দ্বারা সাধারণত শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত প্রমাণপত্রকে বোঝানো হয়ে থাকে। এটাকে শিক্ষাসনদও বলা হয়। একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে এই ধরনের সনদ অর্জন করে থাকেন। সাধারণত এই শিক্ষা সনদ কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ শেষে হাতের লেখার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে এখনো হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় শিক্ষা সনদ লিখেন মুন্সী মনিরুল আহসান।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে নিজ হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা সনদ লিখেছেন তিনি। দীর্ঘ এই যাত্রায় লিখেছেন প্রায় ৭০ হাজারের মতো নিয়মিত শিক্ষা সনদ। যেখানে রয়েছে অনার্স-মাস্টার্সের সনদ ছাড়াও ইভিনিং নম্বরপত্র, ভেরিফিকেশন সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট, বিএনসিসি সনদ, আইআইইআর সনদ ইত্যাদি।

Islamic Universityমনিরুল ইবিতে যোগদান করেন ২০০৬ সালে। প্রথমে তিনি রেজিস্ট্রার শাখায় কাজ করতেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে রেজিস্ট্রার শাখা থেকে আসেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষা সনদ লেখার নেপথ্যের গল্প বলেছেন মুন্সী মনিরুল আহসান। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্কুল জীবন থেকে প্রচুর লেখালেখি করতাম। আমার হাতের লেখার কারণে ছোট থেকেই লোকমুখে প্রশংসা পেতাম। ক্লাস ফাইভে পড়া অবস্থায় হাতের লেখার জন্য পুরস্কৃত হয়েছিলাম এবং ওই সময়ে পরীক্ষায় লেখা সুন্দর হওয়ার কারণে আলাদা ৫ মার্ক দিত। সেই ৫ মার্কই আমি পেতাম। হাতের লেখার ধারাবাহিকতা সব সময় ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। এখনো হাতের লেখা শিখেই চলেছি।

>> আরও পড়ুন: ডলার সংকটে বিদেশে পড়ার স্বপ্ন কি ফিকে হয়ে যাবে!

মনিরুল জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করি। হাতের লেখার কারণেই ২০১৬ সালে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে নিয়মিত শিক্ষা সনদ লিখার কাজে সুযোগ হয়ে যায়। সেই থেকে সনদ লেখার কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করি। সে জন্য আমার খুব গর্ববোধ হয় যে- আমি নিজে খুব কিছু না হলেও দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সনদ লিখছি, যারা বিভিন্ন পর্যায়ে বড় বড় জায়গায় রয়েছে। সনদ লিখার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। যেটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। পেয়েছি অনেক ভালবাসা। কিছুটা হলেও সেবা দিতে পেরেছি।

নিজ কাজে প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী জট ও ভোগান্তি না থাকলে লেখা আরও সুন্দর হয়। যে রুমে সনদ লিখি আসলে এটা সনদ লেখার রুম নয়। এটি মনোরম পরিবেশে লিখতে হয়। একদিকে যেমন শিক্ষার্থী যানজট অন্যদিকে বিভিন্ন কাগজপত্র দিয়ে রুমটি ভর্তি। এই রুমে আমিসহ দুই কর্মকর্তা বসি। মাঝে মাঝে কাজ করতে গিয়ে দেখি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় লিখতে গিয়ে ভুল হয়ে যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের অনেক ভোগান্তি ও কষ্ট করতে হয়। আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় তাদের সময়মতো সনদও দিতে পারি না।

Islamic University Newsমনিরুল বলেন, যতটুকু জানি- সনদপত্র লিখার জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের রুমটিই আলাদা। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-ছাত্রের জন্য, আমরা তাদের জন্যই কাজ করি। তবে রুমটি আলাদা ও মনোরম পরিবেশে হলে কাজ করে আনন্দ পাব।

এ সময় সনদ তুলতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ঢাকা মেইলকে বলেন, ইবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ভোগান্তি থাকলেও সনদপত্র তুলতে এসে ভোগান্তির শিকার হইনি। তিনি (মনিরুল) চেষ্টা করেছেন যথাসময়ে সনদপত্র দেওয়ার। তবে সনদপত্র লিখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা রুমের প্রয়োজন। এমনটা হলে সনদপত্র লিখে তিনিও কমফোর্ট ফিল করবেন, শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবেন।

উল্লেখ্য, মনিরুল আহসানের (৫৫) বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির নাবদিয়া গ্রামে। কুমারখালি ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইভিনিংয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত তিনি।

প্রতিনিধি/আইএইচ