images

সারাদেশ

ডিএনএ পরীক্ষা দিয়ে ৫ মাস পর ইয়াছিনের লাশ পেল পরিবার

জেলা প্রতিনিধি

০৯ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০৪ পিএম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পাঁচ মাস পর ছেলের লাশ বুঝে পেলেন এক বাবা। বুধবার (৯ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১টায় ডিপো কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত মো. ইয়াছিনের লাশ তার বাবা বদিউল আলমের কাছে হস্তান্তর করেন। 

মো. ইয়াছিন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোর লরিচালক ছিলেন। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন তিনি। তার বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামে। চার বোন-তিন ভাইয়ের মধ্যে ইয়াছিন ছিলেন তৃতীয়।

গত ৫ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ইয়াছিনের কোনো সন্ধান পাচ্ছিল না পরিবার। ছেলেকে জীবিত বা মৃত পাওয়ার জন্য ঘটনার পরপরই সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম।

খুঁজেছেন বিভিন্ন হাসপাতালেও, কিন্তু কোথাও সন্ধান পাননি। তখন ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়ে এসেছিলেন তিনি।

ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম জানান, প্রায় ১০ বছর আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়িচালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন ইয়াছিন। দুই বছর আগে পদোন্নতি পেয়ে ডিপোর লরিচালক হন। বিস্ফোরণের সময় ইয়াছিন ডিপোতেই ছিলেন।

>> আরও পড়ুন : ‘ডিপোতে আগুন লেগেছে, ফেসবুক থেকে লাইভ দিচ্ছি, তোমরা দেখো’

ইয়াছিনের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিস্ফোরণের রাতে ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ইয়াছিন। অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য তিনি মোবাইল ফোনে লাইভ দিয়েছিলেন। সেই লাইভ দেখে তিনি (ইউসুফ) তার কাছ থেকে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানতে ফোন দিয়েছিলেন। তখন ইয়াছিন মোবাইলে বলেছিলেন, আগুনের ভয়াবহতা অনেক। আমার জন্য দোয়া করিস। এর কিছুক্ষণ পর তার লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তেই মোবাইলের পর্দা অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর থেকে ইয়াছিনের খোঁজ মেলেনি।

ইয়াছিনের বাবা বদিউল জানান, চার থেকে পাঁচজন মিলে সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপো, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে তন্নতন্ন করে ইয়াছিনকে খুঁজেছেন। কিন্তু কোনো খোঁজ পাননি। ছেলের খোঁজে চট্টগ্রামে গিয়ে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনাও দিয়ে এসেছিলেন।

অবশেষে নিখোঁজের পাঁচ মাস চার দিন পর ছেলের লাশ বুঝে পেয়েছেন বদিউল আলম। ডিএনএ পরীক্ষায় ইয়াছিনের লাশ সনাক্ত হওয়ার পর গত মঙ্গলবার ডিপোর কর্মকর্তারা বদিউল আলমকে ফোন করে ছেলের লাশ বুঝে নিতে বলেন। ফোন পেয়ে আজ ভোরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সীতাকুণ্ডে রওনা দেন। বেলা সোয়া ১টায় ডিপো কর্তৃপক্ষ তার কাছে ছেলের লাশের কফিন বুঝিয়ে দেয়।

বদিউল আলম বলেন, অনেক আগেই ছেলেকে জীবিত পাওয়ার আসা ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েক দিন আগেও ছেলের খোঁজখবর নিতে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। তখন জানানো হয়, আরও কয়েকটি লাশ আছে। পরিচয় নিশ্চিত হলে জানানো হবে।

তিনি বলেন, অন্তত নিজেদের পারিবারিক কবরস্থানে আমার ছেলের কবর হবে। এটাই এখন সান্ত্বনা।

প্রতিনিধি/এইচই