রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘ডিপোতে আগুন লেগেছে, ফেসবুক থেকে লাইভ দিচ্ছি, তোমরা দেখো’

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২২, ০২:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ডিপোতে আগুন লেগেছে, ফেসবুক থেকে লাইভ দিচ্ছি, তোমরা দেখো’
ছবি : ঢাকা মেইল

‘ইয়াছিন সীতাকুণ্ড গিয়ে লাশ হবে, এটা বুঝতে পারলে কখনও তাকে যেতে দিতাম না। আমি ছেলের লাশ চাই, টাকা চাই না।’ 

সন্তানহারা বাবা বদিউল আলম খোকা মিয়া ও মা জোহরা আক্তার ফেনী ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এফডিসির অনুদান অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 


বিজ্ঞাপন


দীর্ঘ ১৪ দিন সন্তানের লাশ শনাক্ত না হওয়ায় দ্রুত ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

খোকা মিয়া বলেন, সীতাকুন্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত সবার লাশ বাবা-মায়ের কাছে এসেছে কিন্তু আমার সন্তানের লাশ আজো ফিরেনি।
 
সন্তানের একমাত্র স্মৃতি ছবি বুকে নিয়ে কেঁদে কেঁদে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন,  বিস্ফোরণের সময় আমার ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে, ‘ ডিপোতে আগুন লেগেছে, আমি ফেসবুক থেকে লাইভ দিচ্ছি, তোমরা দেখো’। আমি ছেলেকে সতর্ক করে বলেছি,  আগুন,  পানি ও কারেন্টের সাথে দুষ্টামি না করার জন্য। ছেলে ইয়াছিন  বলেছে-‘আব্বা. আল্লাহ ভরসা কিছুই হবে না।’ একথা বলে ইয়াছিন মোবাইল ফোনে ফেসবুকে লাইভ করতে যায়, লাইভ চলাকালীন সময়ে তিন মিনিটের মাথায় বিস্ফোরণের শব্দে আমার ছেলের মোবাইলের লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি আমার সন্তান আর বেঁচে নেই। পিতা হয়ে সন্তানের লাশ কিভাবে কাঁধে বহন করবো? 

কথা গুলো বলে কাঁদতে থাকলেন ইয়াছিনের বাবা বদিউল আলম খোকা মিয়া ও মা জোহরা বেগম।


বিজ্ঞাপন


গত ৪ জুন সীতাকুন্ড বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। শনাক্ত না হওয়া ডিএনএ টেস্ট সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফিজার মর্গে দীর্ঘ ১৪ দিন লাশের সারিতে পড়ে আছে নাম না জানা ইয়াছিনদের লাশ। দেখে চেনার উপায় নাই কে ইয়াছিন। ৭ সন্তানের মধ্যে ইয়াছিন ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয়।

১২ বছর আগে সীতাকুণ্ড বিএম কনট্রেইনার ডিপোতে গাড়ী চালকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো ইয়াছিন। ফেসবুক লাইভের ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ কাভার্ডভ্যান চালক মোহাম্মদ ইয়াছিন।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামের বদিউল আলম খোকা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসিন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে ইয়াসিন মেঝো।

ইয়াসিনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা জোহরা আক্তার ছেলের সন্ধানে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছেলে ইয়াছিনের ছবি বুকে জড়িয়ে বসে আছেন তিনি। চার বোন উপার্জনক্ষম ভাইয়ের সন্ধানে প্রহর গুনছে।

ইয়াসিনের বিয়ে করা হলো না 

ইয়াসিনের বাবা বদিউল আলম খোকা মিয়া জানান, এবছর ইয়াসিনকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছিলাম। সে প্রতিমাসের সংসারের জন্য দশ-পনের হাজার টাকা পাঠায়।  আশা করেছিলাম আমার ছেলের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে এখন তাকে বিয়ে করানো দরকার। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের দুঃসহ ঘটনা আমার ছেলের স্বপ্ন, আমার স্বপ্ন, আত্মীয়-স্বজনের স্বপ্ন আর আর বাস্তবে রূপান্তর হতে দিল না। শোকর আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর দরবারে, এখন আমার সন্তানের লাশ চাই।

সন্তানের লাশ চাই, টাকা চাই না

কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা ইয়াছিনের মা জোহরা আক্তার জানান, শুনেছি কোম্পানি আমার ছেলেকে অনেক টাকা দেবে, আমি টাকা চাই না, সন্তানের লাশ চাই। সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপো অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা লাইভ করতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যান চালক মোহাম্মদ ইয়াছিন নিহত হন। নিহত হন ফায়ার কর্মী ফেনীর সবুজ ও ফুলগাজী শাহাদাত। ঘটনার পরেই সবুজ শাহাদাতের লাশ পাওয়া গেলেও ইয়াসিনের লাশ আজও পাওয়া যায়নি।  লাশ নামের কঙ্কাল দেহগুলো হাসপাতালে ফিজার মর্গে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কে ইয়াসিন চেনা যাচ্ছে না। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, আমার সন্তান নেই টাকা দিয়ে কি হবে? দয়া করে আমার সন্তানকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিন। 

উল্লেখ্য, গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর একের পর এক বিস্ফোরণে তা ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ উদ্ধার ও হাসপাতালে মৃত্যু নিয়ে সর্বমোট ৪৯ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে ১০ জনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর