জেলা প্রতিনিধি
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
শরীয়তপুর–ইব্রাহীমপুর চার লেনের সড়ক প্রকল্পের ৯৫ হেক্টরের জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৪৩১ কোটি টাকা প্রায় পুরোটা খরচ হয়ে গেছে মাত্র অর্ধেক জমিতে। বাকি জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজন আরও কয়েকশ কোটি টাকা। এই অর্থ না মেলায় সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম থেমে গেছে, এবং বহু পরিবার এখন পাঁচ বছর ধরে ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায়।
২০১৯–২০২০ অর্থবছরে সরকার অনুমোদন দেয় ৮৬০ কোটি টাকার এই চার লেনের সড়ক প্রকল্প। ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জেলা প্রশাসনকে ৯৫ দশমিক ৮৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেয়। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা প্রাক্কলন করে জানায়, পুরো জমি অধিগ্রহণ করতে ৪৩১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা লাগবে।
![]()
কিন্তু বাস্তবে ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে ১১টি কেসের মাধ্যমে মাত্র ৪৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। এই ছোট অংশেই শেষ হয়ে গেছে ৪৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা—অর্থাৎ বরাদ্দের প্রায় পুরো টাকা শেষ।
এখনো ৪৬ দশমিক ৮৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসনের হাতে আছে মাত্র ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণ শেষ করতে প্রয়োজন আরও ৩০০ কোটি টাকা, যা বর্তমান প্রকল্পে ধরা নেই। এর ফলে সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
যেসব জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, সেখানে মালিকরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে বাকি ৪৬ হেক্টরের মালিকরা পাঁচ বছর ধরে শুধু নোটিশ হাতে নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। ঘর মেরামত করা, দোকান চালানো বা জমি বিক্রি করা—সবকিছু বাধাপ্রাপ্ত।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাপরাইল এলাকার ইব্রাহীম সরদারের ৬ শতাংশ জমির ওপর টিনের বসতঘর ও দোকানঘর রয়েছে। ঝড়ে-বৃষ্টিতে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকলেও সংস্কার করতে পারছেন না। তার ছেলে রাব্বি সরদার বলেন, বাবা অসুস্থ, ঘর ভেঙে যাচ্ছে, দোকান চালানোও কঠিন। পাঁচ বছর ধরে ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি।
৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ৩৩ ফুট প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করার জন্য ২০২০ সালে চারটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়। শেষ করার সময়সীমা ছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বর। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদাররা কাজ শুরু করতে পারেননি। ৬ কিলোমিটার অংশই নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
এরপর আরও চার দফা দরপত্র আহ্বান করা হলেও, জমি না থাকায় প্রতিবারই টেন্ডার বাতিল করতে হয়েছে। বর্তমানে পুনরায় মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
![]()
একজন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০১৯ সালের বাজারদরে। এখন নির্মাণ সামগ্রীর দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। এই দামে কাজ করলে লোকসান। তাই ঠিকাদাররা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বর্তমানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানাখন্দ। সাতক্ষীরা থেকে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করা ট্রাকচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, শরীয়তপুর অংশে এলেই গাড়ি চালানো দারুণ কষ্টকর। সময় ও খরচ দুইই বেড়ে যায়।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, বাকি জমি অধিগ্রহণ করতে আরও ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। ডিপিপি সংশোধন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, বরাদ্দ শেষ, বিষয়টি বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অর্ধেক জমিতে শেষ হওয়া বরাদ্দ, বাকি জমির জন্য অনিশ্চয়তা এবং থমকে
প্রতিনিধি/টিবি