জেলা প্রতিনিধি
২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫ পিএম
আসন্ন ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। শীত মৌসুমের শুরু, টানা ছুটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখো পর্যটক ছুটে আসছেন এই পর্যটন নগরীতে। পর্যটকের আগমনে কক্সবাজার শহরজুড়ে ফিরেছে চেনা প্রাণচাঞ্চল্য ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী, শৈবাল পয়েন্ট, ইনানী পাটোয়ার টেক ও হিমছড়ি এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ সাগরের ঢেউয়ে গা ভাসাচ্ছেন, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে সৈকতে হাঁটছেন, আবার অনেকেই স্মৃতি ধরে রাখতে ব্যস্ত ছবি তোলায়। সন্ধ্যার পর সৈকতজুড়ে আলো-আঁধারি পরিবেশে আনন্দঘন মুহূর্তে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
পর্যটকের ব্যাপক উপস্থিতিতে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা। অধিকাংশ মানসম্মত হোটেলের কক্ষ প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। অগ্রিম বুকিং ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত কক্ষ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
![]()
ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটক গিয়াস উদ্দিন জানান, ব্যস্ত শহরের জীবন থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে কক্সবাজারে এসেছি। এখানে এসে মনে হচ্ছে সত্যিই মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা এক পর্যটক তৌফিক শেখ বলেন, সমুদ্র, পাহাড় আর খোলা পরিবেশ— সব মিলিয়ে কক্সবাজার সব বয়সি মানুষের জন্য উপযুক্ত ভ্রমণকেন্দ্র। পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন।
![]()
টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সৈকত এলাকা, হোটেল জোন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলার জন্য পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কক্সবাজার রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন,“কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সৈকত, হোটেল জোন, পর্যটন স্পট ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হলে দ্রুত পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করছি।”
![]()
তিনি আরও বলেন, পর্যটন নগরীর সুনাম রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। পর্যটকরা নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে সময় কাটাতে পারবেন—এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
অপরদিকে, কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস - রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এ বছর শীত মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের সংখ্যা আশাব্যঞ্জক। প্রায় সব ক্যাটাগরির হোটেলেই ভালো বুকিং রয়েছে। দীর্ঘদিন পর পর্যটন খাতে আবারও প্রাণ ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, পর্যটকদের মানসম্মত সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করতে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোনো পর্যটক ভোগান্তির শিকার হলে সমিতির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
![]()
পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটকের আগমনে রেস্তোরাঁ, শপিংমল, পর্যটনপণ্য বিক্রয়কেন্দ্র, যানবাহন ও বিনোদনমূলক ব্যবসায় চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতি সচল হচ্ছে এবং বহু মানুষের কর্মসংস্থান টিকে থাকছে।
তবে পর্যটকের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট, অতিরিক্ত ভিড় ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে কিছুটা উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। সচেতন মহলের মতে, পর্যটক, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই কক্সবাজারের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব।
সব মিলিয়ে পর্যটকের ঢলে কক্সবাজার এখন আবারও দেশের অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নীল সমুদ্র, বালুকাবেলা আর মানুষের আনন্দঘন উপস্থিতিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজার যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস