সরকারি সিদ্ধান্ত ও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে ইচ্ছুক পর্যটকদের কাছ থেকে জাহাজের টিকিটে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জানুয়ারি পর্যন্ত চলাচলকারী ছয়টি জাহাজের সব টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। বিভিন্ন এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করায় পর্যটকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। বর্তমানে কক্সবাজার শহর থেকে সেন্টমার্টিন রুটে ছয়টি জাহাজ চলাচল করছে। পর্যটকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রায় সব জাহাজের টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত সব জাহাজের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এমভি কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বুকড রয়েছে।

তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতেন এবং মৌসুম ছিল প্রায় পাঁচ মাস। এবার মাত্র দুই মাসে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের অনুমতি রয়েছে। অথচ প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এতে দ্রুত সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে একাধিক পর্যটক অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত দামের বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিলে জাহাজের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ সীমিত সংখ্যক টিকিট ঘিরে কালোবাজার গড়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
তবে এ বিষয়ে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। প্রতিদিন ঘাটে প্রশাসনের লোকজন থাকছেন। এনআইডি, ভ্রমণ পাস ও কিউআর কোড ছাড়া টিকিট কার্যকর নয়। সরাসরি কালোবাজারের সুযোগ নেই। তবে একটি চক্র বিভিন্ন এনআইডি ব্যবহার করে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে—এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
![]()
তিনি আরও বলেন, অনেকে ভ্রমণ পাস বা অন্যান্য জটিলতায় শেষ মুহূর্তে ভ্রমণ বাতিল করছেন। সেই টিকিট ফেরত দিলে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়। ওই বাতিল হওয়া টিকিট দালালরা কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকে।
![]()
চলতি মৌসুমে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি—এই তিন মাস পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ভ্রমণ পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।
![]()
ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ, বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা কেনাবেচা, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল ও সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচল বন্ধ থাকবে। পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত চালু থাকবে। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা নয় মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে এবার ভ্রমণসূচি ও পর্যটক সংখ্যা আগের তুলনায় আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি/এসএস

