images

সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর–বন্দর) আসনে বিএনপির প্রার্থী কে—এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। দলটির দুই নেতা এই আসনে মনোনয়ন পাওয়ার দাবি করায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান শুক্রবার রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনীত করেছেন। অন্যদিকে আগে ঘোষিত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, অফিশিয়াল নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত দলের প্রার্থিতা অপরিবর্তিত রয়েছে এবং কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন।

এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ঘিরে শনিবার দিনভর বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা চলেছে। তাঁদের প্রশ্ন, তাহলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী আসলে কে।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় বিএনপি সারা দেশে ২৩৬ জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়। ওই তালিকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া মডেল ডি ক্যাপিটাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ক্রীড়া সংগঠক মাসুদুজ্জামান মাসুদের নাম ছিল। তবে তাঁর নাম ঘোষণার পরপরই চার মনোনয়নপ্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর বিপক্ষে মাঠে নামেন। তাঁরা হলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম এবং প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল।

গত ১৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মাসুদুজ্জামান মাসুদ নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপসহ পারিপার্শ্বিক কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এমন ঘোষণা দেওয়ায় দলের নেতারা তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হন। এ সময় তাঁর অনুগত কর্মী ও সমর্থকেরা প্রেস ক্লাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তাঁকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানান। দুদিন পর মাসুদুজ্জামান আবার নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন।

নিজের আগের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়ে আমি আমার দল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির নেতা–কর্মীদের কষ্ট দিয়েছি। এ জন্য আমি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমার আগে আমরা, আমাদের আগে দেশ, ক্ষমতার আগে জনতা, সবার আগে বাংলাদেশ। আজ এই মঞ্চ থেকে আমি ঘোষণা দিচ্ছি—দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তার সঙ্গে একমত থাকব। আমি বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছি এবং নির্বাচনে অংশ নেব ইনশা আল্লাহ।’

মনোনয়ন প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতরের দায়িত্বে থাকা সাত্তার পাটোয়ারী তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে মনোনয়ন ফরমের রশিদ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু জাফর আহম্মেদ বাবুল বলেন, দল থেকে মনোনয়ন পরিবর্তন করে অন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে—এমন কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আবুল কালাম বলেন, মনোনয়ন পরিবর্তনের খবর শোনা গেলেও অফিশিয়ালভাবে কিছু জানানো হয়নি। আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, তিনিও মনোনয়ন পরিবর্তনের কথা শুনেছেন, তবে দল থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা পাননি।

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী মাসুদুজ্জামানের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা

মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, তিনি ফেসবুকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাই তাঁর অবস্থান। বিএনপির দফতর বা কেন্দ্রীয় কোনো নেতা তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু জানাননি।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রার্থী তালিকায় কোনো সংযোজন বা বিয়োজন হলে তা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। আগামী সোমবার দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে আবু আল ইউসুফ খান টিপু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে হতাশা প্রকাশ করে লেখেন, ইনসাফের মায়ের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে ইনসাফ নেই, সেখানে বলার কিছু থাকে না। তিনি অভিযোগ করেন, একজন বারবার সবকিছু পায়, আর অন্যরা বঞ্চিত হয়। ত্যাগ ও যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে তিনি দলের ভেতরের বৈষম্যের কথাও উল্লেখ করেন।

এআর