images

সারাদেশ

‘জামায়াতে ভোট দিলে শান্তিতে থাকতে দিব না’

জেলা প্রতিনিধি

১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৩ পিএম

আপনারা ভোট দিলে বিএনপিকে দিয়েন। না দিলে আপনারা ঘরে শুয়ে থাকেন। কিন্তু আপনারা আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ওই জামায়াত-রাজাকারদের ভোট দিয়ে ঘরে শান্তিতে থাকবেন, ওই শান্তিতে কিন্তু আমি থাকতে দিবো না। এভাবেই ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে তার এই বক্তব্যটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই স্থানীয় ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দা ঘাট এলাকায় বিএনপি কার্যালয়ে এমন বক্তব্য দেন তিনি। পর পরই বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি তার ফেসবুক আইডি থেকে বক্তব্যটি সরিয়ে নেন। পরে রোববার বিকেল ৪টার দিয়ে অপর একটি লাইভে তিনি দাবি করেন তার বক্তব্যটি একটি মহল কাটছাট করে ফেসবুকের মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মতিউর রহমান সাগর দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

বক্তব্যে তাকে আরও বলতে শোনা যায়, আওয়ামী লীগের যেসকল ভাইয়েরা আছেন, এলাকায় আছেন, দূরে আছেন বিগত দিতে আকাম-কুকাম করেছেন, বিভিন্ন অরাজকতা করেছেন আজকে থেকে মাফ করে দিব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না। আপনারা এলাকায় থাকবেন। চিন্তা করে দেখেন আগামীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসতেছে। এলাকার স্বার্থে হলেও, উন্নয়নের স্বার্থে হলেও, সুবিধা অসুবিধার স্বার্থে হলেও আপনারা বিএনপির পাশে থাকবেন। যদি আপনাদের দল পুনর্বাসন হয়, আপনাদের দল যদি আবারো কখনো প্রতিষ্ঠিত হয়, আপনাদের দল যদিও আবারো কখনো এদেশের রাজনীতি করার সুযোগ পায়, যদি তখন আপনারা আমাদের ছেড়ে চলে যান তখন আমাদের আপত্তি থাকবে না। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ওই জামায়াত-রাজাকারদের ভোট দিয়ে ঘরে শান্তিতে থাকবেন, ওই শান্তিতে কিন্তু আমি থাকতে দিবো না।

বিষয়টির ব্যাপারে জানতে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরের মুঠোফোনে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে হোয়াটসঅ্যাপে দুইবার কল দিলে তিনি কল রিসিভ না করে কেটে দেন। তবে তার ফেসবুকে রোববার বিকেল ৪টার দিকে অপর একটি লাইভে তিনি বলেন, তার বক্তব্যটি কাটছাঁট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসময় তিনি অপপ্রচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর-২ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ভিডিওটি আমাদের হাতে এসেছে। এটি স্পষ্টতই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ইলেক্টোরাল কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তবে নিজ দলের নেতার এমন বক্তব্যের দায় নেয়নি বিএনপি। নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি দাদন মুন্সি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং এতে নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিষয়টি আমাদের নজরে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি। তবে ঘটনা সত্য হলে দলীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

অন্যদিকে, নড়িয়া পূর্ব শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমির কাজী আবুল বাসার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিতর্কিত ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। জনগণই এর উপযুক্ত জবাব দেবে। আমরা বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

উল্লেখ্য, শরীয়তপুর-২ আসনে আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী শফিকুর রহমান এবং জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রতিনিধি/টিবি