সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে অনলাইন নিউজপোর্টাল বার্তা বাজার ডটকমের শরীয়তপুর প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল করে এ হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় তাকে বলা হয়, ‘নড়িয়াতে কোনো মামলা হলে আপনি প্রস্তুত থাইকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন। দেখব আপনাকে কে বাঁচায়।’
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, আশিকুর রহমান গত ৭ অক্টোবর বার্তাবাজারে ‘চাল বিতরণে অনিয়ম, বিএনপি নেতার রোষানলে ইউএনও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেই প্রতিবেদনে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার বিএনপি নেতা মতিউর রহমানের অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হয়। এরপর রাতেই সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করেন মতিউর রহমান। অভিযোগ অনুযায়ী, ফোনে তিনি সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বলেন— ‘আমার চোখের সামনে পইড়েন, আমার কথা রেকর্ড কইরেন... আওয়ামী লীগ করেন, আবার আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেন! নড়িয়াতে কোনো মামলা হলে দেখবেন কে বাঁচায় আপনাকে।’
এই কথাগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন সাংবাদিক আশিকুর রহমান। তিনি জানান, এর আগেও নানা প্রতিবেদন করেছেন, কিন্তু এভাবে সরাসরি ভয়ভীতি কখনো পাননি।
ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার ছিলেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান। সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান তদন্তে নেমে বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পান। স্থানীয় পাঁচজন ভুক্তভোগী লিখিতভাবে জানান, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। তদন্তে ৩৫৫ কেজি চাল ঘাটতিও ধরা পড়ে। এরপর ৩১ আগস্ট মতিউর রহমানকে জরিমানা এবং ২৪ সেপ্টেম্বর খাদ্য অধিদপ্তর তার ডিলারশিপ বাতিল করে।
বিজ্ঞাপন
ডিলারশিপ বাতিলের পর মতিউর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি ৬ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ইউএনওর বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেন।
এর পরদিনই বার্তাবাজারে সেই অনিয়ম সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় — আর তাতেই সাংবাদিক আশিকুর রহমানের ওপর শুরু হয় হুমকি-ভীতি প্রদর্শন।
সাংবাদিক আশিকুর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুরে সাংবাদিকতা করছি। সব সময় চেষ্টা করি সত্য তুলে ধরতে। কিন্তু সত্য প্রকাশের জন্য এমন হুমকি পাওয়া দুঃখজনক। বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। প্রশাসনের কাছে সুরক্ষা চাই। তিনি হুমকির ঘটনার পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানান।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান বলেন, সাংবাদিক আশিকুর রহমান জিডি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগরের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
অন্যদিকে, নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর পর খাদ্য অধিদপ্তর তার ডিলারশিপ বাতিল করেছে। এ নিয়ে তিনি তার (ইউএনও) ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। লোকমুখে শুনেছেন, তিনি তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের একটি অভিযোগ করেছেন।
প্রতিনিধি/টিবি

