জেলা প্রতিনিধি
২৪ জুন ২০২২, ১১:০৩ এএম
Failed to load the video
ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে হিসহিস শব্দে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট রেলওয়ে জংশন থেকে তৎকালীন পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) জগতি স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছিল একটি ট্রেন। ট্রেনটি ছিল বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের (লোকমোটিভ)। সেদিনই প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিন ট্রেন দেখেছিল এ দেশের মানুষ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট। হারিয়েছে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের কু-ঝিক-ঝিক শব্দ। তবে রেলের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ন্যারোগেজ ও ব্রডগেজ লাইনের দুইটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন এখনও স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার প্রবেশদ্বারের সামনে প্রদর্শনী ইয়ার্ডে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে ব্রিটিশ রানির বিলাসবহুল সেলুন কোচ
বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮৬২ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেল সেবা চালুর পরবর্তী একশত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই লোকোগুলো বাংলাদেশের রেলে সেবা দিয়ে এসেছে। ১৯৫৩ সালে কানাডার তৈরি ‘ইএমডি বি-১২’ মডেলের ২০০০ শ্রেণীর মিটার গেজ লোকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডিজেল লোকোর সূচনা হয় এবং রেলে ডিজেল লোকোর চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে আধুনিকতার দাপটে ধীরে ধীরে কমতে থাকে বাষ্পীয় লোকোর ব্যবহার। দেশে সর্বশেষ স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয় ১৯৮৪ সালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ডিজেল লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হয় বাংলাদেশের রেল পরিবহন ব্যবস্থায়। ডিজেল লোকোর মধ্যে ডিজেল ইলেকট্রিক ও ডিজেল হাইড্রোলিক, এই দুই ধরনের লোকো রয়েছে দেশে। গেজ অনুযায়ী বাংলাদেশে ব্রড-গেজ (১,৬৭৬ মি.মি.), মিটার-গেজ (১,০০০ মি.মি.) এবং লোকোর ব্যবহার রয়েছে। ন্যারো-গেজ (৭৬২ মি.মি.) থাকলেও রেলপথের ব্যবহার বর্তমানে না থাকায় সচল নেই কোনো ন্যারো-গেজ লোকো ।
এছাড়াও ২০২০ সাল পর্যন্ত মিটার-গেজ ও ব্রড-গেজ মিলিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় মোট ৪৬৫টি ডিজেল লোকো (পুরনো ৩০০০ সিরিজ ব্যতিত) । এদের অধিকাংশই ডিজেল–ইলেক্ট্রিক, তবে ৮০টি লোকোমোটিভ ডিজেল–হাইড্রোলিক। ৪৬৫টি লোকোর মধ্যে ৩৩৮টি মিটার-গেজ ও ১২৭টি ব্রড-গেজ।
আরও পড়ুন: রাজশাহীর ‘ব্রেকআপ টেবিলে’ যত কারবার
এদিকে কালের সাক্ষী হয়ে থাকা সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখা ঐতিহাসিক ন্যারো-গেজ লোকমোটিভটি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ সালে চলাচল করেছে খুলনা-রূপসা ইস্ট থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত। আর এর যাত্রাপথ ছিল ৩২ কিলোমিটার। তৎকালীন এই ৩২ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন ছিল ১০টি। রেলপথটিকে ১৯৮০ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। আর সেই থেকেই থেমে যায় বাষ্পীয় (কয়লা) ইঞ্জিনের গতি।
সেয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ডিভিশনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট (ডিএস) সাদেকুর রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, সর্বশেষ বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৮৪ সালে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়। এরপর বাংলাদেশে আর কোনো স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়নি।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই কারখানাটিতে স্টিম লোকোমোটিভ মেরামত করা হত, আমরা সেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে এই লোকোমোটিভ আমরা এখানে রেখেছি। সাধারণ মানুষ যদি আগ্রহী হন, তারা বিভিন্ন সময়ে এখানে এসে এই লোকোমোটিভসহ আমাদের যাদু ঘরের বিভিন্ন জিনিস পরিদর্শন করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, খুলনা বাগেরহাট সেকশনে ন্যারোগেজ লাইন চলমান ছিল। সেই সেকশনেই আমাদের এই লোকোমোটিভটা— যেটি এখন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় সংরক্ষিত আছে সেটি পরিচালিত হত। ১৯৬৯ সালের দিকে এই লোকোমোটিভ ও রেললাইন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে এটি এখানে জাদুঘরের একটি অংশ হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।
আরও পড়ুন: চা পাথর আর কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রাচীন মোহ পঞ্চগড়ে
সাদেকুর রহমান বলেন, এটি দেখার জন্য আগ্রহী অনেকেই বাইরে থেকে আমাদের কারখানায় আসেন এবং কারখানার অনান্য বিষয়গুলো, লোকোমোটিভগুলো দেখে তারা ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। আমরা মনে করি এটিও যদি একটি বড় জাদুঘরের অংশ হিসেবে কোথাও স্থানান্তরিত হয় তাহলে আরও লোকজন এটি দেখার সুযোগ পাবে।’
প্রতিনিধি/এএ