জেলা প্রতিনিধি
০১ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১৪ পিএম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের নয় বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিচার পায়নি তার পরিবার।
২০১৬ সালের ১ আগস্ট কুবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের অন্তর্কোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। খালেদ সাইফুল্লাহ কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সদর দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর দিন মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন মজুমদার। ওই দিনই ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি রূপম দেবনাথ, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল আলম জুয়েল, লোকপ্রশাসন বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক, সুদীপ্ত নাথ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্বজন বরণ বিশ্বাসকে আটক করা হয়। তিন দিন পর রাজধানী থেকে আটক করা হয় মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব চন্দ্র দাসকে। আটকের পর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তবে বর্তমানে তারা সবাই জামিনে মুক্ত।
প্রথমে মামলার তদন্ত করেন জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। সংস্থাটি নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। তবে চার্জশিটে নারাজি দেন খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার। দ্বিতীয় দফায় তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। আবারও তিনি নারাজি দেন ওই চার্জশিটের। তৃতীয় দফায় মামলাটি পিবিআই থেকে সিআইডিতে যায় এবং সর্বশেষ মামলাটি কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কাছে রয়েছে৷
এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর মামলার আসামিদের বাঁচাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অর্থের বিনিময়ে তদবির করার অভিযোগ উঠেছে কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর বিরুদ্ধে।
খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা বলার এক প্রসঙ্গে তিনি প্রতিবেদককে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আমলে আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা তো দূরের কথা, উল্টো তৎকালীন প্রশাসন আসামিদের চাকরি দিয়েছে। তাদের বিচার না হওয়ার জন্য আগে আসামিদের পক্ষে ছাত্রলীগের নেতারা গিয়ে সুপারিশ করত। এখন অর্থ লেনদেন করে ছাত্রলীগের আসামিদের পক্ষে ছাত্রদলের নেতারা সুপারিশ করে।
ছাত্রদলের কারা সুপারিশ করে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আমাকে জানানো হয়েছে শুভ আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তাদের পক্ষে সুপারিশ করতে এসেছে।
তবে হত্যা মামলায় জড়িত ছাত্রলীগের আসামিদের পক্ষে সুপারিশ করার বিষয়টি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ অস্বীকার করেন।
এর আগে ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন খালিদ সাইফুল্লাহ মা ফাতেমা বেগম ও বাবা মোহাম্মদ নুরুল আবেদিন। এসময় তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ, বিপ্লব চন্দ্র দাস, রেজা ই এলাহি, আলিফ, ফয়জুল ইসলাম ফিরোজ, আবু বক্কর সিদ্দিক, সাইফ সোহেল, মাজহারুল ইসলাম হানিফের নাম উল্লেখ করে বলে ওরা আমাকে বার বার চাপ প্রয়োগ করে আসছে চার্জশিট থেকে নাম তুলে নেয়ার জন্য।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। গত বছরের জানুয়ারিতে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কাজ চলছে। মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়। চার্জশিট থেকে কোনো আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতারা সুপারিশ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। তবে তদন্ত কতদিন লাগবে জানতে চাইলে ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, মামলার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমিল্লা সদরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলাটির তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। খালেদ সাইফুল্লাহর মায়ের নারাজির জন্য মামলার তদন্ত বারবার পিছিয়ে গেছে। মামলা দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা নিয়মিত আদালতে যাচ্ছি মামলার খোঁজ খবর নিচ্ছি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমাদের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা মামলা পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমরা নিয়মিত আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি।
প্রতিনিধি/এসএস