পারিবারিক বিরোধের জেরে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লিটন সিকদার লিটুকে (৪২) নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুরের বিল্লবাড়ি এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।
বিজ্ঞাপন
এসময় নিহতের ছোট ভাই, বোন ও মাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পাশাপাশি ভূক্তভোগীদের ঘরে হামলা-ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত জনকে আটক করেছে বলে নিশ্চিত করেছে এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির হোসেন সিকদার। এই হামলা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ মাহমুদ খান মিলটন ঘটনার সময় দূরে অবস্থান করে তিনশ লোক নিয়ে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে নিহতের বোন আহত মুন্নি বেগম।
নিহত লিটন সিকদার লিটু (৪২) বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিস্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ওই গ্রামের নজির সিকদারের ছেলে।
গুরুতর আহত নিহতের মা হালিমা বেগম (৬০), ছোট ভাই সুমন সিকদার (৩৫) ও বোন মুন্নি বেগমকে (৩৮) বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত মুন্নি বেগম জানান, একই গ্রামের বাসিন্দা তার স্বামী জাকির হোসেন গাজী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এ নিয়ে তাদের পারিবারিক বিরোধ হয়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে মুন্নি ও জাকির পাল্টাপাল্টি মামলা করেন।
বিজ্ঞাপন
সেই মামলার আসামি হিসেবে বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিনের পর নিহত লিটুসহ তার পরিবারের লোকজন পুলিশ নিয়ে বাড়িতে আসেন। তখন পুলিশের সামনে বসে তাদের ওপর হামলা করে ঘরে ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে। এছাড়াও তার ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যাসহ তাদেরও কুপিয়ে আহত করা হয়।
নিহত লিটুর ছোট ভাই সুমন সিকদার বলেন, মিলটন দূরে দাঁড়িয়ে থেকে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে। মিলন গাজী, রাজিব, নাসিম, বিন্ত গাজী, নাসিম, সানিসহ তিনশ লোক হামলা চালায়। নিহত লিটু মাদক বিক্রেতা রাজিব ও সুমনকে একাধিক বার পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে।
পারিবারিক ইস্যুতে মিলটন কিভাবে যুক্ত হলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুমন বলেন, মিলটন আহত মুন্নির স্বামী জাকির চাচাত ভাই। তবে অভিযুক্ত মিলটন বলেছেন সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি (মিলটন) জাকিরকে মুন্নির স্বামী হিসাবে চেনেন, অন্য কোন সম্পর্ক নেই তাদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত লিটুর স্বজন বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগেও নিহত লিটু নগরীর বিসিক পুল এলাকায় মাদক বিক্রিতে বাধা দেয়। তখন ঘটনাস্থলে মিলটন ছুটে আসে। এরপর মাদক বিক্রিকালে আটক ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় মিলটনসহ কয়েকজন। তখন এক পোটলা গাজা ও ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছিলেন লিটুসহ স্থানীয়রা। তখন মিলটন লিটুকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে দাবি তার।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিলটন অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, বহিস্কৃত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিটন ওরফে লিটু এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। লিটু সিকদারের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ট ছিলো।
কয়েকদিন আগে লিটু তার বোন জামাতা জাকির হোসেনকে মারধর করে গোপনাঙ্গে বিদ্যুতিক শক দিয়েছে। চার দিন আটকে নির্যাতনের পর এলাকাবাসী ও পুলিশ তিন তিন আগে জাকিরকে উদ্ধার করে। জাকির বন্দি থাকার সময় তার কাছ থেকে জোর করে ফাঁকা চেক ও স্টামে সই নেয়। এ ঘটনায় জাকির এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেছে। এরপর মুন্নি নির্যাতনের শিকার জাকির ও আমাকে (মিলটন) আসামি করে মামলা করেছে। জাকিরের নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে আমি (মিলটন) গণমাধ্যমে বক্তব্য দেই। এর জের ধরে আমাকেও আসামি করেছে করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন হাসান বলেন, লিটুর বিভিন্ন কাজে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত ছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ নিয়ে লিটু বাড়িতে আসে। তখন স্থানীয়রা বিক্ষোভ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা লিটুকে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে দুই ঘন্টা পর পুলিশ এসে লিটুকে উদ্ধার করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এসময় উত্তেজিত গ্রামবাসী পূনরায় পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে লিটু সিকদারকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কুপিয়ে লিটুর একটি হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। নিহতের মা, বোন ও ছোট ভাইকেও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। তাদের অবস্থাও আশংকাজনক।
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির শিকদার সিকদার বলেন, হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিলনা। সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত শেষে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ওসি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে হামলাকারী ও নিহতের পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিলো। যা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং মামলা রয়েছে উভয় পক্ষের। যে বিষয়ে থানা পুলিশ আগে থেকেই অবগত রয়েছেন। তবে শনিবার সন্ধ্যায় আকস্মিক এ হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রিয়াজ হোসেন জানিয়েছেন, পারিবারিক ঘটনার সূত্র ধরে এই হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনা। প্রধান অভিযুক্ত জাকির হোসেনসহ হামলাকারীদের গ্রেফতারে ওই এলাকায় অভিযান চলছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ৭ জনকে হেফাজতে নিয়েছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওসি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে হামলাকারী ও নিহতের পরিবারের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিলো। যা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং মামলা রয়েছে উভয় পক্ষের। যে বিষয়ে থানা পুলিশ আগে থেকেই অবগত রয়েছেন। তবে শনিবার সন্ধ্যায় আকস্মিক এ হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) রিয়াজ হোসেন জানিয়েছেন, পারিবারিক ঘটনার সূত্র ধরে এই হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনা। প্রধান অভিযুক্ত জাকির হোসেনসহ হামলাকারীদের গ্রেফতারে ওই এলাকায় অভিযান চলছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ৭ জনকে হেফাজতে নিয়েছি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/একেবি

