জেলা প্রতিনিধি
২৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং ১০ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ আলীয়ারা গ্রামে ছালেহ আহম্মদ সাবেক মেম্বার ও আবুল খায়ের মেম্বার পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়, রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা এবং বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চলে।
জানা গেছে, গত ১৩ জুলাই ছালেহ আহম্মদ গোষ্ঠীর একটি গরু আবুল খায়ের গোষ্ঠীর জমির ধান খেয়ে ফেলে। এ নিয়ে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি হয়। এরপর ছালেহ আহম্মদ গোষ্ঠীর লোকজন আবুল খায়ের গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় দুই পক্ষ থানায় চারটি এবং আদালতে একটি, মোট পাঁচটি মামলা করে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে পুলিশ শেখ ফরিদ নামের একজনকে গ্রেফতার করে। তিনি ছালেহ আহম্মদ গোষ্ঠীর লোক বলে জানা গেছে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা চরমে ওঠে।
শেখ ফরিদের গ্রেফতারের পর শুক্রবার সকালে উত্তর পাড়ায় জাফর আহম্মদের দোকানের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম ধাপে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন আরও ১০ জন।
গুলিবিদ্ধ হয়েছেন—শরীফা বেগম, তারা মিয়া, রিয়াদ, শেখ ফরিদ, আশরাফুল, নূরুদ্দিন, জামাল, শহীদ, তামিম, জাহিদুল, কবির আহম্মদ, আবু তাহের, হোশনেয়ারা, সুফিয়া বেগম ও ওসমান।
আহতরা হলেন- পরান বেগম, জয়, মরিয়ম বেগম, জিয়াউল হক, আবুল কাশেম, বাহাদুর, সোহাগ ও সুমনসহ অনেকে।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সীমা মজুমদার বলেন, হাসপাতালে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ মোট ১৪ জনকে ভর্তি করা হয়। গুলিবিদ্ধদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে আহত আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, ছালেহ আহম্মদের ছেলে নূরউদ্দিন, রিয়াদ ও দুলাল এলজি দিয়ে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধসহ আমাদের গোষ্ঠীর অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
অন্যদিকে ছালেহ আহম্মদ গোষ্ঠীর রিয়াদ হোসেন বলেন, আবুল খায়ের গোষ্ঠীর তৌহিদ, আলমগীর, আজিম ও তোতা মিয়াসহ অনেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমাদেরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়।
দুই পক্ষের সাবেক মেম্বার ছালেহ আহম্মদ ও আবুল খায়েরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, সংঘর্ষের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ততক্ষণে সংঘর্ষকারীরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ কাউকে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস