নাতিকে দেখার সৌভাগ্য হলো না দাদা-দাদির: ট্রাকচাপায় পরিবারের ৭ জনই নিহত

পরিবারে ছেলে বৌয়ের প্রথম ছেলে সন্তান হয়েছে। সে খবরে দাদা-দাদিসহ পরিবারের সবাই আনন্দিত। সকালে দাদা জাহিদুল ইসলাম পরিবারের ৭ সদস্যদের নিয়ে ছেলে বৌ ও নবজাতক নাতিকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসতে মেহেরপুর থেকে একটি মাইক্রোবাসে চড়ে ছেলের শ্বশুর বাড়ি সিরাজগঞ্জে যাচ্ছিলেন। এসময় নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকার তরমুজ পাম্প এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় সড়কে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নারীসহ পাঁচজন নিহত হন।

এসময় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু'জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে দু'জনের মৃত্যু হয়।

বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকার তরমুজ পাম্পের সামনে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আমজাদ হোসাইন, বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস, বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন, নাটোর বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাঈল হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

নিহতরা হলেন- কুষ্ঠিয়া দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ এলাকার মৃত জিল্লুর রহমানের ছেলে দাদা জাহিদুল ইসলাম (৫৫), তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫০), শাশুড়ি আনজুমান (৭৫), ছোট বোন রওশন নারা আক্তার ইতি (৪৮), চাচতো বোন আনোয়ারা খাতুন (৫৫), চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আনু (৫০) ও শালিকা সীমা (৩৫) এবং একই গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে মাইক্রোবাস চালক শাহাবুদ্দিন (৪২)। 

নাটোর বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ওসি ইসমাঈল হোসেন জানান, সকালে ছেলে বৌ ও নবজাতক নাতিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসতে মেহেরপুর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দাদা জাহিদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। এসময় মাইক্রোবাসটি বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী (তরমুজ পাম্প) এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় সড়কে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসে থাকা নারীসহ ৫ জন নিহত হন। এসময় তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু'জনকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু'জনের মৃত্যু হয়।

বড়াইগ্রাম থানার কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, বড়াইগ্রামে ট্রাক ও মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় গুরুতর অবস্থায় আহত তিনজকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়। পরে রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু'জনের মৃত্যু হয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আমজাদ হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অপর দু'জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে দু'জনের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাক চালক পালিয়ে গেছেন। আইনি কার্যক্রম শেষে নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস