জেলা প্রতিনিধি
২২ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম
রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের মরদেহ রাজশাহীতে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টায় ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে তার মরদেহ পৌঁছে। এরপর বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে নগরীর উপশহরে তার বাসায় নেওয়া হয়।

এসময় বাসার সামনে স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নার রোল পড়ে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যান কয়েকজন স্বজন। প্রচণ্ড ভিড়ে মরদেহ না নামিয়ে রেলগেট মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৌকিরের নানা আজিজুর রহমান আকাশে দিকে তাকাতে থাকেন। এসময় ঢাকা মেইলকে নাতির স্মৃতিচারণ করেন তিনি। আজিজুর রহমান বলেন, আমি সইতে পারছি না। খুব নম্র ভদ্র ও অমায়িক ছেলে ছিল তৌকির, যার কোনো তুলনা হয় না। খুব বন্ধুপ্রিয় ছিল। দেশের একটা রত্ন ছিল, অকালে ঝরে গেল। আজিজুর রহমান বলেন, আমি মেনে নিতেই পারছি না। মন যে মানে না, আমার নানুভাই তৌকির আর নেই।

স্মৃতিচারণ করে পাইলট তৌকিরের নানা বলেন, গত ঈদে ১২ তারিখ শেষ বিদায় দিয়ে এসেছি। ওটাই ছিল শেষ দেখা। কোরবানির ঈদের পরে ওটা। সেদিন তাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছি। ওই নিজেই গাড়ি চালাল। আমি বললাম, ড্রাইভারকে দাও। ও বলল, নানা আমি চালিয়ে যাব। গাড়িতে স্বামী-স্ত্রী ছিল। নাতনি ছিল।
কান্নায় ভেঙে পড়ে বৃদ্ধ আজিজুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, শেষবার বাসায় এসে আমার বুকে ওর বুক রেখে কথা বলল, কোলাকুলি করল। খুব সাহস ছিল ওর। আমাকে ওর ওখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছিল, নানু আমি রুম ভাড়া করেছি, যাওয়াই লাগবে।

আজিজুর রহমান বলেন, একবার গিয়েছিলাম এবং ওখানে থাকলাম। আমাকে নিজে ঘোরাল গাড়িতে। শুক্রবার ছুটির দিন ছিল, অনেককিছু দেখাল। তৌকির হাসিখুশি মন, মানুষের প্রতি সে খুব দয়াবান ছিল। মানুষের কষ্ট দেখতে পারত না। বিদায়ের দিন বলল, নানু ভাই থাকেন। আমি যাই দোয়া করবেন। যেন সহি সালামতে থাকতে পারি। ওটাই ছিল শেষ দেখা। কে জানত এভাবে মারা যাবে আমাদের তৌকির।

নগরীর রেলগেটে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে ৪টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তারপর সপুরা কবরস্থানে বিকেলে তার দাফন সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে সোমবার দুপুরে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিনি আহত হন। উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতিনিধি/এসএস