জেলা প্রতিনিধি
২২ জুলাই ২০২৫, ০১:১১ পিএম
খুব ভাল ছেলে ছিল তৌকির। ব্যবহার ছিল অমায়িক। ওর বাবা নতুন বাসা করছিল সপুরায়। সেই বাসায় আর ওঠা হলো না তৌকিরের। এখন কবর খনন কাজ চলছে। বিকেলে জানাজা শেষে সপুরা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। আপনারা তার জন্য দোয়া করিয়েন— কান্না জড়িতকণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন তৌকিরের চাচা মতিউর রহমান।
তিনি আরও জানান, গোরস্থানের পাশেই সপুরা ছয়ঘাটি মোড়ে তাদের নিজস্ব বাসার নির্মাণকাজ চলছে। সেই বাসার কাজ কয়েক মাসের ভেতর শেষ হলে সেখানে এসে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু আর সেই বাসার আর ওঠা হলো না তৌকিরের। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে নগরীর সপুরা গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
জানা গেছে, পাইলট তৌকিরের বংশীয় বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে তার পরিবার রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। তৌকিরের বাবার নাম তোহরুল ইসলাম, তার মায়ের নাম সালেহা খাতুন। একমাত্র বোন বৃষ্টি মেডিকেল কলেজে অধ্যায়নরত।
তৌকির রাজশাহীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তৌকির যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে। তৌকিরের স্ত্রী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার। ঢাকায় থাকতেন তিনি। রাজশাহীতে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে নিজের বাসায় উঠতে চেয়েছিলেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সপুরা গোরস্থানের অদূরে ছয়ঘাটি মোড়ে নিজস্ব জায়গায় তৌকিরের বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। দোতলা বিল্ডিং ইতোমধ্যে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালেও মিস্ত্রীরা এসেছিলেন বিল্ডিংয়ের কাজের জন্য। তবে তৌকিরের সংবাদ তারা জানতেন না। সংবাদ শুনে তারা কাজ থেকে ফিরে যান।
তৌকিরের চাচা মতিউর রহমান ও সাদিকুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, সপুরা ছয়ঘাটি মোড়ে বাসার কাজ চলছে। কয়েক মাস লাগত কাজ শেষ হতে। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেল তৌকির। সেই বাসায় আর ওঠা হলো না তার।
সপুর ও উপশহর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ঢাকা মেইলকে বলেন, তৌকির খুবই ভদ্র ও মেধাবী ছিলেন। গত কুরবানি ঈদে স্ত্রীসহ এসেছিলেন তিনি। বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারি। অনেক জাঁকজমক আয়োজন ছিল। নতুন বাসায় ওঠার ইচ্ছা ছিল তার। ছুটিতে এসে বাসার কাজ দেখেও গেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজস্ব বাসায় তার আর ওঠা হলো না। তার মৃত্যুতে পুরো রাজশাহীতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পাইলট তৌকিরের মা সালেহা খাতুন মুঠোফোনে ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন কথা বলতে পারছি না। আমরা ঢাকায় আছি। তাকে নিয়ে আমরা রাজশাহী আসব। আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই।
প্রতিনিধি/টিবি