images

সারাদেশ

মির্জা ফখরুলের ছোট ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন

জেলা প্রতিনিধি

১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিনের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি।

রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়িতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বাড়িতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. পয়গাম আলী লিখিত বক্তব্যে বলেন, সম্মেলন একটি দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সম্মেলনে পরবর্তী দুই বছরের জন্য কাউন্সিলরদের মতামত/সমর্থনের ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হয়। যেহেতু দল একটি সাংগঠনিক পরিবার সেহেতু সবার ঐক্য, সৌহার্দ্য রক্ষার স্বার্থে সাধারণত দলীয় সম্মেলনে দলে অবদান ও সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের চেষ্টা বা প্রক্রিয়া করা হয়। এরপর কোনো কারণে সমঝোতা ব্যর্থ হলে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।

thumbnail_IMG_6777

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক গতকাল শনিবার (১২ জুলাই) বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি সম্মেলনে ১ম অধিবেশনের সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম শেষে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. পয়গাম আলীর সভাপতিত্বে ২য় অধিবেশনের কার্যক্রম ও নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে দুপুর আড়াইটায় ভোটের যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয় এবং কাউন্সিলরদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ৪৯০টি ভোটের মধ্যে ৪৮৮টি ভোট কাস্ট হয় যা প্রায় শতভাগ।

ভোট গ্রহণ শেষে যথারীতি সমীর উদ্দিন স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের ৩য় তলায় প্রার্থী এবং পুলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে গণনায় সভাপতি পদে অ্যাড. মো. সৈয়দ আলম ছাতা মার্কায় ২৪১টি ভোট এবং আবু হায়াত নুরুন্নবীর চেয়ার মার্কায় ২৪২টি ভোট পাওয়া যায়।

গণনাকালে ০৪টি বাতিল ভোট এবং ০১টি ভোট চশমা মার্কায় পাওয়া যায়। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দায়িত্বরত নেতারা পুনরায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাইকালে বাতিল করা ০৪টি ভোট হতে ০১টি ভোট ছাতা মার্কার পক্ষে যায়। সর্বশেষ ছাতা মার্কা ও চেয়ার মার্কা সমান সংখ্যক ২৪২টি ভোট গণনায় পাওয়া যায়। গণনার সময় উভয় প্রার্থীদের এজেন্টরা কোনোরূপ আপত্তি করেননি। পরবর্তীতে নির্বাচনের দায়িত্বরত নেতারা অন্যান্য দুইটি পদের ভোট গণনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন।

আরও পড়ুন

গুনে গুনে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য ক্যাশিয়ার উজ্জ্বল বড়ুয়া

তিনি বলেন, নিয়মমাফিক নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক, সদস্য এবং সম্মেলনের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও ফলাফল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাতা মার্কার প্রার্থী অ্যাড. মো: সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে তাদের উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকরা গণনা কক্ষে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার, নির্বাচনী কাগজপত্রের ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং স্বাক্ষরবিহীন খসড়া ফলাফল শিট ছিনিয়ে নেন।

এক পর্যায়ে তারা চূড়ান্ত ফলাফল শিটে তাদের পক্ষে ফলাফল স্বাক্ষর করে ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্বাচনের দায়িত্বরতদের চাপ সৃষ্টি করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, লাঞ্ছিতসহ মেরে ফেলার হুমকি-ধমকি দেন। তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসন এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যগণ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রার্থী অ্যাড. মো. সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমানসহ তাদের সমর্থকরা দায়িত্বরতদের গণনাকক্ষে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

thumbnail_IMG_6778

গণনাকক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলনের প্রধান অতিথি মির্জা ফয়সল আমিনকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনি দলের নেতাদের নিরাপত্তা এবং অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্দেশে গণনা কক্ষে ছুটে আসেন। তিনি সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশল করে নেতাদের মুক্ত করে আনেন। সম্মেলনে নির্বাচনের কোনো স্বাক্ষরিত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

অতঃপর তিনি তিনতলা থেকে নিচতলায় নেমে আসার সাথে সাথে অ্যাড. মো. সৈয়দ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ড. টিএম মাহবুবর রহমানের নেতৃত্বে তাদের উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকরা তাকে লক্ষ করে লাঠিসোঁটা চেয়ার দিয়ে হামলা এবং তাকে বহরকারী গাড়ি ভাঙচুর করেন। এক পর্যায়ে জেলা থেকে আগত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা তাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং তারাও আহত হয়। জেলা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহায়তায় তিনি ও অন্যান্য নেতারা সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন এবং তার গাড়িতে হামলার ঘটনা আপনারা ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অবগত হয়েছেন। অদ্য দলের পক্ষ থেকে আসল ঘটনা আপনাদেরকে স্পষ্ট করা হলো।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য একটি অপরিহার্য বিষয় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মী এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ও দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় জেলা বিএনপির বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিনিধি/এসএস