images

সারাদেশ

গাজীপুর ইলেকট্রিক মেকানিককে নির্যাতন করে হত্যা, এক শ্রমিক গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি

৩০ জুন ২০২৫, ০২:৪১ পিএম

গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানাধীন কাশিমপুর রোডে একটি পোশাক কারখানায় ইলেকট্রিক মেকানিককে চোর অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাত আনুমানিক ৮টা হতে শনিবার (২৮ জুন) বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার মধ্যে ঘটনা ঘটলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রথমে গোপন করার চেষ্টা করায় বিলম্বে ঘটনাটি প্রকাশ পায়।

ঘটনার পর থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

নিহত ইলেকট্রিক মেকানিক হৃদয় হোসেন (১৯) টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার শুকতারবাইদ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। তিনি  কোনাবাড়ীর হারিনাবাড়ী এসরারনগর হাউজিং এলাকায় মিরাজের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে স্থানীয় গ্রিনল্যান্ড ফ্যাক্টরিতে ডাইং সেকশনের ইলেকট্রিক মেকানিক হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করতেন।

আরও পড়ুন

গাজীপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, থানায় মামলা

গ্রেফতার হাসান মাহমুদ মিঠুন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার হাদিরা বাজার এলাকার মফিজ উদ্দিন এর ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন কুদ্দুস নগর এলাকায় আয়নালের বাড়ির ভাড়াটিয়া।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২৮ জুন) সকালে চুরির মিথ্যা চোর অপবাদ দিয়ে গ্রিনল্যান্ড গার্মেন্টসের মেকানিক সেকশন ও নিরাপত্তা কর্মীরা হৃদয়ের হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে দুপুরের দিকে হৃদয় মারা যায়। ঘটনার খবর আশপাশের অন্যান্য গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রায় ৪০০-৫০০ শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসে এবং গ্রিনল্যান্ড গার্মেন্টসের সামনে গিয়ে কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হৃদয় হত্যার বিচার দাবি করেন। এ সময়ে তারা কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ গার্মেন্টসের মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে পালিয়ে যায়।

সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে (২৮ জুন শনিবার) কতিপয় লোক হৃদয়কে দড়ি দিয়ে হাত পিঠ মোড়া করে বেঁধে কারখানার ভেতরে একটি কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। পরে ওই কক্ষে তার ওপর অমানুষিক ও নির্মম নির্যাতন করা হয়। শনিবার সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে কারখানা ভেতরে একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেখা যায়। অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃত অবস্থায় হৃদয়কে নিয়ে ১০টা ২১ মিনিটে এম্বুলেন্সে কারখানা ত্যাগ করে। হৃদয় মারা যাওয়ার পর তার শরীরের একাধিক ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে। তাতে তার শরীরে হাঁটুতে, কোমরে, পিঠে, হাতের কব্জিতে, কনুইতে এবং হাতের নখে, গলায় এবং মুখমণ্ডলে রক্তাক্ত ও কালচে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।  এসব থেকে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা অনুমান করা যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার ভেতরে নির্যাতনের তার মৃত্যু হওয়ার পর বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে আহত দেখিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে রেজিস্ট্রারে তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে স্থানান্তর করে।

আরও পড়ুন

গাজীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের গুলি ছোড়ার ভিডিও ভাইরাল

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, হৃদয় (১৯) মা-বোনের সাথে কোনাবাড়ী থানাধীন হরিনাচালা এসরারনগর হাউজিং সাকিনস্থ মিরাজের বাসায় ভাড়া থেকে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করত।  গত ২৮ জুন বিকাল সাড়ে ৪টার সময় বাদীর মা মোবাইলে ফোন করে বাদীকে জানায় যে, গত ২৭ জুন রাত্র আনুমানিক ৮টার সময় হৃদয় খাওয়া দাওয়া শেষে ডিউটির উদ্দেশে বাসা হতে বের হয়ে যায় এবং ডিউটি শেষ করে এখন পর্যন্ত বাসায় ফিরে আসেনি। উক্ত সংবাদ পেয়ে বাদী তাৎক্ষণিক মায়ের বাসায় এসে মাকে নিয়ে হৃদয়ের অফিসে যায়। সেখানে গিয়ে লোকজনের কাছে জানতে পরে হৃদয়ের মৃত্যুর বিষয়ে গ্রিণল্যান্ড লিমিটেড ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা টাঙ্গাইল-গাজীপুরগামী মহাসড়কের পাকা রাস্তার ওপর রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছে। তখন আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন হৃদয়ের লাশের সন্ধান করলে উক্ত অফিসের লোকজন জানায় যে, হৃদয়ের লাশ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরে পরিবারের লোকজন উক্ত হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে হৃদয়ের লাশ শনাক্ত করে।

মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, ওই সংবাদ পেয়ে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ ও হৃদয়ের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য উক্ত হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন, গত ২৭ জুন রাত আনুমানিক ৮টা থেকে ২৮ জুন বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা একই উদ্দেশে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কোনাবাড়ী থানাধীন কোনাবাড়ী সাকিনস্থ গ্রিণল্যান্ড লিমিটেড ফ্যাক্টরির ভেতরে হৃদয়কে মারপিট করে গুরুতর জখম করত: হত্যা করে লাশ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বাদী লিটন মিয়া ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।

আরও পড়ুন

গাজীপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ

এ ঘটনায় নিহতের ভাই লিটন বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ জড়িত একজনকে গ্রেফতার করেছে  জানিয়ে কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে একজন চোর ফ্যাক্টরির দেয়াল টপকে ভেতরে আসার সময় ড্রেনে পড়ে আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতাল থেকে জানান, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা শোনার পর কারখানায় অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ এবং হত্যায় ব্যবহৃত অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হই এটি হত্যাকাণ্ড।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার পরে কারখানার ভেতরে হৃদয়কে নির্যাতন করার ফুটেজ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতেই হৃদয় মারা যায়। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শনিবারে সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে হৃদয়ের লাশ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে কারখানার সবাই পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনা জানতে পেরে বিক্ষোভ করে।

প্রতিনিধি/এসএস