জেলা প্রতিনিধি
২৫ মে ২০২৫, ০৮:৩৮ এএম
মাস খানেকের মধ্যে যে ধান কৃষকের গোলায় ওঠার কথা ছিল কিন্তু একটি ভুলের কারণে পুরো ১০০ শতাংশ জমির ধানগাছ পচে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে বর্গাচাষি দরিদ্র কৃষক পরিবারটি। ওষুধ বিক্রেতার দাবি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগ করার কারণে জমির ধান গাছ পচে গেছে। ১২ হাজার টাকা দিয়ে কৃষক পরিবারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন ওষুধ বিক্রেতা।
মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরমত্ত গ্রামের বর্গাচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ১০০ শতাংশ জমিতে ইরি বোর ধান করা হয়। ধান খেতে আগাছা দেখা দেয়। ১৫ দিন আগে মানিকগঞ্জ শহরের গফুর ট্রেডার্স থেকে ধান খেতের আগাছা পরিষ্কার করার জন্য ওষুধ চাই। ওষুধ বিক্রেতা এক্সট্রা পাওয়ার ও ফরগোল্ড নামক ওষুধ দেন। বিক্রেতার কথা মতো ওই ওষুধ ধান খেতে প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগের কয়েক দিনের মধ্যে ধানের পাতা কালচে রং ধারণ করে। এর কয়েক দিনের মধ্যে পুরো খেতের ধানগাছ পচে যায়।
![]()
কৃষক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, তারা পরের জমি নিয়ে বর্গাচাষ করেন। ১০০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করতে তাদের ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ ধান হওয়ার কথা ছিল। এতে তাদের সারা বছরের খাবার হতো। মাসখানেক দিন পর যে ধান বাড়িতে ওঠার কথা ছিল আজ ওষুধ কোম্পানির কারণে আমাদের সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। যার কাছ থেকে ওষুধ কেনা হয়েছিল তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা দিয়ে আপোশের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ওই টাকা আমরা গ্রহণ করেনি।
মানিকগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় মেসার্স গফুর ট্রেডার্সের মালিক মো. গফুর বলেন, ধান খেতের আগাছা পরিষ্কার করার জন্য ওই কৃষককে এসিআই কোম্পানির এক্সট্রা পাওয়ার ও গোল্ড নামক ওষুধ দেওয়া হয়। ওই কৃষককে বলা হয়েছিল ১২ ডাম পানির সঙ্গে মিশিয়ে ওষুধ স্প্রে করার জন্য। কিন্তু কৃষক কম পানির সঙ্গে ওষুধ স্প্রে করার কারণে ধানগাছ পচে গেছে। তারপরও মানবিক বিচারে কৃষককে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসাইন বলেন, এ ওষুধ এসিআই কোম্পানির তৈরি। জমিতে যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে তা আগাছা পরিষ্কারের ওষুধ। কিন্তু কৃষক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করার কারণে ধানগাছ পচে গেছে। স্থানীয় কয়েকজনের পরামর্শে তিনি এসিআই কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ওই দোকানদারের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এনে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।
![]()
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, কোনো দোকানদার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ছাড়া সরাসরি কৃষকের কাছে ওষুধ বিক্রি করতে পারে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই ধান খেতে আগাছা পরিষ্কার করার জন্য যে ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে তা প্রয়োগ বিধি মেনে করা হয়নি। মাত্রাতিরিক্ত স্প্রে করার কারণে ধানগাছ পচে গেছে। কৃষি অফিস থেকে ধানগাছের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে কি কারণে ধানগাছ পচে গেছে। ১২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এভাবে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে দিতে পারেন না।
প্রতিনিধি/এসএস