images

সারাদেশ

লঞ্চে দুই তরুণীকে মারধর: বৈষম্যবিরোধী নেহালসহ মামলার আসামি ২৬

জেলা প্রতিনিধি

১১ মে ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম

মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে একটি লঞ্চে অনৈতিক কাজের অভিযোগে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় মামলায় হয়েছে।

রোববার (১১ মে) সকালে নেহাল আহমেদ ওরফে জিহাদের নামে উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় মুক্তারপুর নৌপুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

thumbnail_1000010006

যৌন নীপিড়ন, বেআইনি মারধর করে ভাঙচুর, ক্ষতি ও হুমকির অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতনের ১০ ধারায় মামলাটি করা হয়।

এ মামলায় নেহাল আহমেদকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর আগে শনিবার দুপুরে নেহাল মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ওই দিন পুলিশ তাকে আটক দেখায়। নেহাল মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার যোগনীঘাট এলাকার বাসিন্দা। মামলার বাদী হয়েছেন মুক্তারপুর নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মিলন।

thumbnail_1000009587

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম।

রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তিনি বলেন, শুক্রবার ১৯-২০ বছর বয়সী দুই তরুণীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সে ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার আমরা জিহাদকে (নেহাল আহমেদ) থানায় আসতে বলি। সে থানায় আসলে তাকে আটক করি। ঘটনার মামলা করার জন্য ওই তরুণীদের থানায় আসতে বলা হয়। তারা কেউ আসেনি। লঞ্চ কর্তৃপক্ষকেও অভিযোগ দিতে বলা হয়। তারাও আসেনি। সব শেষ রোববার সকালে মুক্তারপুর নৌপুলিশ বাদী হয়ে মারধর, লঞ্চ ভাঙচুর এবং লঞ্চে লুটপাটের ঘটনায় মামলা করেছে। মামলায় একজনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জন আসামি রয়েছে। মামলাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করবে। নেহাল আহমেদকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

thumbnail_1000009586

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এমভি ক্যাপ্টেন নামে ওই লঞ্চে দুই তরুণীকে লঞ্চের একেবারে সামনের অংশে উঠিয়ে বেল্ট দিয়ে পেটাচ্ছেন এক তরুণ। সে  সময় স্থানীয় লোকজন সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে উল্লাস করছিলেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। অন্য আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লঞ্চের এক কেবিনে এক তরুণীর সঙ্গে কয়েকজন তরুণ। সেখান থেকে তাদের বের করে আনছিলেন স্থানীয়রা।

thumbnail_1000010000

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ২০০-৩০০ জন যাত্রী নৌভ্রমণে বের হন। প্রথমে লঞ্চটি রাজধানীর সদরঘাটে থামে। সন্ধ্যার দিকে লঞ্চটি চাঁদপুরের মোহনপুরের উদ্দেশে সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে পিকনিকের চাঁদা দেওয়া নিয়ে ওই লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে কিছুটা ঝামেলা হয়। রাত আটটার দিকে নাশতা নেওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে লঞ্চটি থামানো হয়। সে সময় ওই লঞ্চের কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে স্থানীয় লোকজন মাদকাসক্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে লোকজন লঞ্চের ভেতরে গিয়ে তল্লাশি চালান। সেখানে কয়েকজনকে আপত্তিকর অবস্থায় পেয়ে লঞ্চে ভাঙচুর করেন তারা। কয়েকজনকে মারধর করেন। খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে লঞ্চটিকে ঢাকার দিকে ফিরিয়ে দেয় বলে তিনি জানান।

thumbnail_1000010007

মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার নেহাল আহমেদ অনুতপ্ত। তিনি বলেছেন, তার ভুল সে বুঝতে পেরেছে। আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল। তাই নিজেই থানায় গিয়েছিলেন। নেহাল বলেন, তরুণীদের জনতার রোশানল থেকে বাঁচাতে বড় ভাই হিসেবে শাসন করেছিলেন তিনি।

thumbnail_1000010000

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেকোনো ভ্রমণের জন্য লঞ্চ সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত চাঁদপুরসহ তাদের পছন্দ মতো স্থানে অবস্থান করে। সন্ধ্যার মধ্যে আবার ঢাকার দিকে ফিরে আসে। অথচ এই লঞ্চটি সেদিন রাতে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে আসে। সেখান থেকে চাঁদপুরের মোহনপুরের দিকে যাওয়ার কথা ছিল। সেদিন কেবিনের মধ্যে যারা ছিল তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত ও আপত্তিকর অবস্থায়। তাহলে সারারাত লঞ্চের ভেতরে থাকা তরুণ তরুণীরা কি করতো!

আরও পড়ুন

লঞ্চে ২ তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধর: সেই যুবক গ্রেফতার

তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর করা অনেক বড় অন্যায়। অবশ্যই শাস্তি হওয়া দরকার। পাশাপাশি যারা লঞ্চে অসামাজিক কার্যকলাপ করছিল, যারা লঞ্চ ভাড়া দিয়েছিল তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা দরকার।

প্রতিনিধি/এসএস