images

সারাদেশ / শিক্ষা

ছয়তলার জন্য দশ বছর! চবিতে ‘ধীরগতির’ আবাসিক হলের গল্প

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

০৬ মে ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আবাসন সংকট নিরসনে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর তৎকালীন স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নির্মাণকাজ। কিন্তু সেই হল নির্মাণ শেষ করে শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য খুলে দিতে সময় লেগে গেছে দীর্ঘ এক দশক।

এ সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নানা জটিলতায় পড়েছে হলটি। শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও পরবর্তী আন্দোলনের মুখে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদ মো. ফরহাদ হোসেন হল। অবশেষে চলতি বছরের ১ মে, দুপুর ১টায় হলের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এর আবাসিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান জানান, এ পর্যন্ত আমরা ৭১৩ জন শিক্ষার্থীকে হলে উঠিয়েছি। জরুরি কাজগুলো শেষ করে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে মাঠ, গ্যারেজ, উদ্যানসহ আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে, যেগুলোর জন্য নতুন বাজেট প্রয়োজন হতে পারে।

দশকে এক হল: সময়ের চাকা কেন থেমে ছিল?

প্রকৌশল দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৫ হাজার বর্গফুটের দোতলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর। এতে ১৮৬টি আবাসন সিট ছাড়াও দু’টি লিফট, এসি পাঠাগার, জেনারেটর, ক্যান্টিন, ইনডোর গেমস, কমনরুম, প্রার্থনাকক্ষ, ওয়েটিং রুম, লন্ড্রি, প্রভোস্ট ও শিক্ষক কক্ষসহ আধুনিক সব সুবিধা রাখা হয়।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ না দিয়ে ২০১৭ সালের ২০ জুলাই থেকে হলটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তখন শুরু হয় ৬ তলায় উন্নীত করার কাজ, যা ৭৩৮ আসনের বিশাল পরিসরে রূপ নেয়। নতুন আয়তন দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৪৮ বর্গ মিটার।

আরও পড়ুন

চবির ৫ম সমাবর্তন: আয় ৬ কোটি, প্রয়োজন ১২ কোটি টাকা

প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর ফজল জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য ২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬১৫ টাকার বাজেট পাশ হয়, যার মধ্যে ২২ কোটি ৪ লাখ টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ১৩টি বিলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকার বেশি অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।

বারবার মেয়াদ বাড়ানো, তবুও শেষ হয়নি কাজ

২০১৯ সালের শেষদিকে তৎকালীন উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ঘোষণা দেন, শিগগিরই হলটি চালু করা হবে। কিন্তু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ঢালি কনস্ট্রাকশন’ কাজ শেষ না করায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ছয়বারের বেশি কাজের মেয়াদ বাড়ান। তবুও পুরো কাজ শেষ হয়নি।

পরবর্তী উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আবু তাহের শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দের উদ্যোগ নিলেও জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। অবশেষে বর্তমান উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের নেতৃত্বে হলটি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়।

উপাচার্য বলেন, আজ আমাদের জন্য এক আনন্দময় দিন। নতুন হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। আমরা আমাদের সীমিত সম্পদের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, হলে দখলদারিত্বের সংস্কৃতি এখন অতীত। বর্তমান প্রশাসন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ নিশ্চিত করেছে, যা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই করা হয়েছে।

প্রতিনিধি/এসএস