জেলা প্রতিনিধি
০৩ মে ২০২৫, ০২:২৪ পিএম
নাগলিঙ্গমের সৌন্দর্যে অভিভূত প্রকৃতিপ্রেমী দ্বিজেন শর্মা তার ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘আপনি বর্ণে, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চর্য ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।’
নাগলিঙ্গম একটি দুর্লভ গাছ। অদ্ভুত সুন্দর এ ফুলের বেশ আকর্ষণীয়, মনোরম। সাধারণত বেশিরভাগ উদ্ভিদের ফুল শাখায় ফুটলেও নাগলিঙ্গমের ফুল ফোটে গাছের গুঁড়িতে। গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হয় ছড়া। তারপর শত শত ফুল। ফুলভর্তি গাছ দেখলে মনে হবে, কেউ বুঝি গাছের কাণ্ড ছিদ্র করে ফুলগুলোকে গেঁথে দিয়েছেন।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামে এমনই একটা দুর্লভ গাছ আছে।
![]()
সম্প্রতি শহরশ্রীর সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মৃদু বাতাসেই দোল খাচ্ছে গাছগুলোর কাণ্ড ফুঁড়ে বের হওয়া বাহারি ফুলগুলো। বাতাসের দোলায় আর পাখির ঠোকরে এর পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ছে গাছের তলায়। আশপাশ ফুলের সৌরভ ভরিয়ে তুলেছে।
বাড়ির মালিক দেওয়ান গউছউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রায় ৬০ বছর আগে তার বড়ভাই নার্সারি থেকে একটি ফুলের চারা এনে বাড়িতে রোপণ করেন। তখন এটা কী জাতের ফুলের গাছ, তা তারা জানতেন না। ধীরে ধীরে গাছটি বড় হয়ে একসময় গাছে ফুল আসে। তারপর খোঁজখবর নিয়ে ফুলের জাত চেনা গেছে।
![]()
ফুলগুলো বেশ আকর্ষণীয়, চোখে পড়লেই পথচারীকে থমকে দাঁড়াতে হয়। অনেকে ফুল দেখতে ভিড় করছেন এই বাড়িতে। কেউ কেউ এই বিরল ফুলের সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করছেন। অনেকের কাছেই নাগলিঙ্গম নতুন এক বিস্ময়ের ফুল।
স্থানীয় দর্শনার্থী রূপম আচার্য বলেন, এই গাছের ফুল গাছের গুঁড়ি থেকে ফোটে। পাতাই দেখা যায় না, শুধু ফুল আর ফুল। গাছ থেকে চোখ ফেরানোর উপায় নেই। যা সত্যিই অসাধারণ।
এমন ফুল এর আগে কখনই দেখেননি জানিয়ে শিক্ষার্থী শায়লা শারমিন বলেন, নাগলিঙ্গম গাছের সৌন্দর্য সত্যিই চমৎকার।
এবারের মতো এতো ফুল আগে কখনও ফোটেনি জানিয়ে বাড়ির মালিক দেওয়ান গউছউদ্দিন আহমদ বলেন, গাছটি প্রায় ১৫ বছর ধরে ফুল ফুটছে। প্রথম যখন ফুল ফোটে, কী ফুল, আমরা চিনতে পারিনি। পরে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে চিনতে পারি, এটা নাগলিঙ্গম।
![]()
প্রকৃতিপ্রেমী দ্বিজেন শর্মা নাগলিঙ্গম সম্পর্কে জানিয়েছেন, এ গাছের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চলে। নাগলিঙ্গম ফুল সারাবছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে উপযুক্ত সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে।
ছয়টি পাপড়ির ফুল গাঢ় গোলাপি, সঙ্গে হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ। ফুলগুলো বেশ বড় বড়। দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। ধারণা করা হয়, এ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। দিন-রাতের যেকোনো সময় নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা আপনাকে কাছে টানবেই।
প্রতিনিধি/এসএস