images

সারাদেশ

পাহাড়ের ৪ আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ বেতন-ভাতায় অনিয়মের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি

২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৭ পিএম

বান্দরবান ও রাঙামাটির চারটি আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ এবং বেতনভাতা প্রদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগের আওতায় থাকা বিদ্যালয়গুলো হলো—বান্দরবানের সুয়ালক ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়, রুমা উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়, আলীকদম আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় এবং রাঙামাটির রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে সুয়ালক ও রুমা বিদ্যালয় দুটি এমপিওভুক্ত হলেও বাকি দুটি এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি।

বিদ্যালয়গুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ‘টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প’-এর আওতায় পরিচালিত হয়। প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে একনেক অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নবায়ন হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, কিছু শিক্ষক একইসঙ্গে সরকারি এমপিওভুক্ত বেতন এবং উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পভুক্ত বেতন উভয় খাত থেকেই গ্রহণ করছেন।

এমন অনিয়মে জড়িত শিক্ষকদের মধ্যে আছেন— সুয়ালক ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহিন উদ্দিন, রুমা উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মিত্র এবং রাজস্থলী উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেন। আরও সাতজন সহকারী শিক্ষকও একই অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর, রুমা উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী এ বিষয়ে দুদকে অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ ও ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালায় উল্লেখ ছিল এমপিওভুক্ত প্রধান শিক্ষকেরা ৭ম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকেরা ১০ম গ্রেডের মূল বেতন পাবেন। কিন্তু উন্নয়ন বোর্ড তাদের ৬ষ্ঠ ও ৮ম গ্রেডের বেতন প্রদান করে, যা নীতিমালা লঙ্ঘন করে।

এছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে পাহাড়ি ভাতা এবং দুই উৎসবে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন, যেখানে সরকারি বিধান অনুযায়ী তারা এই সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। পাশাপাশি প্রকল্পে গ্র্যাচুইটি পাওয়ার বিধান না থাকলেও শিক্ষকরা নিয়মিতভাবে মোটা অঙ্কের গ্র্যাচুইটি গ্রহণ করছেন।

২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দুই বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত নয়জন শিক্ষক প্রায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রায় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকার গ্র্যাচুইটি গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।

এছাড়া শিক্ষক নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রুমা উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) আব্দুর রহিম প্রয়োজনীয় ডিগ্রি ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন। একইভাবে বাংলা বিষয়ের কোনো অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও রোকসানা আক্তারকে বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সুয়ালক ম্রো বিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগ না থাকা সত্ত্বেও সীমা বড়ুয়াকে বাণিজ্য বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সোমবার (২১ এপ্রিল) সরেজমিনে প্রধান শিক্ষক মো. মহিন উদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আর অন্যান্য বিষয়ে  মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) সুজন চৌধুরী সোমবার (২১ এপ্রিল) জানান, বিদ্যালয়গুলো প্রকল্পের বাইরে রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্কুলগুলো সরাসরি উন্নয়ন বোর্ড পরিচালনা করলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রকল্প ও সরকার উভয় খাত থেকে বেতন নেওয়ার বিধান নেই। বিষয়টি পুরনো কর্মকর্তাদের সময়ের সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান (যুগ্ম সচিব) রিপন চাকমার মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করে ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তিনি ফোন ও মেসেজের উত্তর না দেওয়ার কারণে তার বক্তব্যে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতিনিধি/টিবি