images

সারাদেশ

হাতিয়ায় তমরোদ্দি গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ

জেলা প্রতিনিধি

২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১২ পিএম

ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে রিকশায় চড়ে স্কুলে যাওয়া তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করতেও আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও কষ্ট করে স্কুলে যেতে হচ্ছে। আমার সাথীরাসহ এলাকার সবাই এই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে। ধুলাবালিতে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় কাদামাটিতে আমাদের বই পোশাক নষ্ট হয়ে যায়।

কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরোদ্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাধিকা সাহা। সঙ্গে ছিলেন তার দাদি মিনতি সাহা। রাস্তার দুরবস্থার বিষয়ে কথোপকথনের এসময় স্থানীয় আঠারোবেকি গ্রামের কিছু লোকজনও জড়ো হয়। বছরের পর বছর এতে চলাচলে দুঃসহ অভিজ্ঞতার বিষয়টি তুলে ধরেন এলাকার এসব বাসিন্দারা। পাশাপাশি এখানে অবস্থানরত কোস্ট গার্ড-অপরাধবিরোধী অভিযানে গাড়ি চলাচলে বড্ড অসুবিধা পোহাতে হয় বলেও জানান তারা।

thumbnail_IMG20250413120033

উপজেলার তমরোদ্দি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আঠারোবেকিতে রাস্তাটির অবস্থান। যা তমরোদ্দি বাজার থেকে দক্ষিণে কাটাখালি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের এই জি.সি রাস্তাটির প্রায় অধিকাংশ স্থান তলিয়ে জমির সঙ্গে সমতল হয়ে গেছে। খানাখন্দ প্রায় পুরো রাস্তাজুড়ে। প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ এই রাস্তা দিয়ে তমরোদ্দি বাজার আর কাটাখালির দক্ষিণে যায়। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি আর বর্ষায় বৃষ্টিজল-কাদামাটিতে এখানকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এরই মাঝে আবার দু’তিন জায়গায় ব্যক্তি মালিকানাধীন বাউন্ডারি ওয়াল এবং পুকুরের কারণে রাস্তাটি সরু হয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।

thumbnail_IMG20250413110854

জনতা বাজার হয়ে চরচেঙ্গা পর্যন্ত পুরো জি.সি রাস্তাটির বেহাল দশা। তারমধ্যে তমরোদ্দি বাজার থেকে দক্ষিণে কাটাখালি অংশে জনদুর্ভোগ চরমে। এই দেড় কিলোমিটারের উত্তর পাশে তমরোদ্দি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মাঝখানে হাতিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ফার্নেস ওয়েল পাম্প কেন্দ্র এবং দক্ষিণ মাথায় রয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের দক্ষিণ জোন। আশপাশে রয়েছে স্কুল-মাদরাসাও।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের কষ্টের কথা তুলে ধরেন প্রতিবেদকের সামনে।

আরও পড়ুন

৫ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামটি মহাসড়ক অবরোধ

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব মিনতি সাহা জানান, প্রসূতিদের ক্লিনিকে নিতে স্বজনদের খুব বিপাকে পড়তে হয়। তার নাতিনাতনিদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় হয়। তিনি আরও জানান, কেউ রাস্তাটি মেরামত করছে না। আলাউদ্দিন বাবু চেয়ারম্যান থাকতে এর দেখাশোনা করতেন। এখন কোস্ট গার্ডের গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হওয়ায় তারা মাঝেমধ্যে খানাখন্দগুলোতে বালি দিয়ে থাকে।

thumbnail_IMG20250413114633

সিরাজ নামের এক ব্যক্তি জানান, হাঁটে ঘাটে যেতে তাদের খুব কষ্ট হয়। এই রাস্তা হওয়ার পর বাবু চেয়ারম্যান একবার প্লাটসলিং করার পর আর কোনো কাজ হয়নি। একই বিষয় জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মনির চৌকিদার। তিনি বলেন, ইট-বালি ব্যবসায়ীরা ভাঙাচোরা গর্তে মাঝেমধ্যে কিছু ইট-বালি দিয়ে থাকেন। এতে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পরে আবার আগের মতো খানাখন্দ হয়ে যায়। তমরোদ্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, রাস্তাটি খুবই জনগুরত্বসম্পন্ন। তাই দ্রুত এর মেরামতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এলজিইডি ডিপার্টমেন্টের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের দক্ষিণ জোন-হাতিয়া স্টেশন কমান্ডার লে. আকতার হোসেন বলেন, অপরাধ বিরোধী অভিযান পরিচালনায় বের হলে আমাদের ফোর্স বিপাকে পড়তে হয়। এই রাস্তাটির দুরাবস্থার কারণে আমাদের গাড়ি চলাচলে খুব অসুবিধা হয়। জরুরি কোনো মেসেজ আসলে দ্রুত বের হতে গেলে ভাঙা রাস্তায় গাড়ি আটকে যায়, কখনও কখনও বন্ধ হয়ে যায়। তাই দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের দাবি জানান তিনি।

thumbnail_IMG20250413115430

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, তমরোদ্দি জি.সি-চরচেঙ্গা জনতা বাজার হয়ে জি.সি. রাস্তাটি সিডিডব্লিউএসপি প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে জরিপ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু পয়েন্টে জায়গা স্বল্পতার কারণে এখনও স্টিমেট করা যাচ্ছে না। তবুও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সড়কটির উন্নয়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান এই প্রকৌশলী।

প্রতিনিধি/এসএস