images

সারাদেশ

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদারদের বাঁধাঘাট-পাথুরে মন্দির

জেলা প্রতিনিধি

২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০১ এএম

নড়াইলে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চিত্রা নদীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী বাঁধাঘাট, পাথরের তৈরি একটি মন্দিরসহ কয়েকটি স্থাপনা। জমিদারদের আমলে নির্মাণ হয়েছিল বড় বড় দালান কোটা ও বিভিন্ন স্থাপনা। যার সবকিছুই এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। নড়াইলে একসময় প্রতাপশালী জমিদারদের বসবাস ছিল। তবে এখনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে জানতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে ঐতিহ্যবাহী এসব স্থাপনা দেখতে ছুটে আসেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, অযত্ন আর অবহেলায় জমিদারদের সকল স্থাপনা এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে শুধু চিত্রা নদীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী বাঁধা ঘাট, পুলিশ লাইন এলাকায় পাথরের তৈরি একটি মন্দির, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রাচীন গ্যালারি ভবন এবং হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়িতে একটি মন্দির ও সাঁন বাঁধানো পুকুর ঘাট। তবে এসবের মধ্যে বাঁধাঘাট ও পাথুরে মন্দিরটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।  দেখে মনে হয়, স্থাপনা দুটি যেন সবেমাত্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বেশিরভাগ দর্শনার্থী ভিড় করেন এখানে।

thumbnail_IMG_20250422_075231

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৭৯১ সালে নড়াইলে জমিদারি প্রথা চালু করেন জমিদার কালিশংকর রায়। পরে তার দুই ছেলের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয় জমিদারি। বড় ছেলে রাম নারায়ণকে নড়াইল জমিদারবাড়ি ও ছোট ছেলে জয় নারায়ণ রায়কে হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের মধ্যদিয়ে অবসান হয় হয় তাদের জমিদারি। জমিদারদের বংশধররা তখন চলে যান কলকাতায়। পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগে ১৯৫০ ও ১৯৫২ সালের দিকে কয়েকজন এদেশে আসলেও তারা আবার চলে যান। পড়ে থাকে তাদের নির্মিত জমিদার বাড়ি, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসবাসের জন্য বহুসংখ্যক ভবন, বিনোদনের জন্য নাট্যমঞ্চ, ধর্মীয় উপাসনার জন্য পুজামন্ডপ ও মন্দির, খাজনা আদায়ের জন্য কাচারীঘর, কয়েকটি ছোট বড় পুকুর, দীঘি ও বাঁধাঘাট।

জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জমিদারদের নির্মিত বাঁধাঘাটটি বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসন সংস্কার করেছে। বাঁধা ঘাট চত্বর টাইলস ও রেলিং দিয়ে বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের মধ্যে অবস্থিত প্রচীন গ্যালারি ভবনটিও সংস্কার করা হয়েছে৷ পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য সরকারি উদ্যোগে হাটবাড়িয়া জমিদারবড়িতে একটি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে থাকা মন্দিরটির প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। সেখানে এখনো নিয়মিত পূজা-আর্চনা চলছে।

thumbnail_IMG_20250422_075358

স্থানীয় ও দর্শনার্থীরা বলেন, নড়াইল জেলার সঙ্গে জমিদারদের অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। জমিদার আমলের অনেক স্থাপনায় নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এখনো যেগুলো টিকে আছে সেগুলো যথাযথ ভাবে দেখভাল করা দরকার। এগুলো টিকে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চোখের সামনে ইতিহাস দেখতে পাবে।

হাদিউজ্জামান নামে এক দর্শনার্থী বলেন, চিত্রা নদীর কোল ঘেঁষা নড়াইলের বাঁধা ঘাট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য। অনেক মানুষ এটি দেখতে আসে। জমিদারদের দুটি মন্দির আর এই বাঁধা ঘাট ছাড়া আর তেমন কিছু দেখার মত নেই। প্রশাসনের উচিত এগুলো সংরক্ষণ করা। তাহলে এগুলো দেখতে নড়াইলে অনেক দর্শানার্থীরা আসবেন।

যশোর থেকে হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি দেখতে আসা মো. তয়েব মোল্যা বলেন, সবার কাছ থেকে শুনেছি এখানে জমিদারদের অনেক স্মৃতি রযেছে। এখানে এসে তেমন কিছু দেখতে পাইনি। শুধু দেখতে পেলাম, এখানে জমিদারদের একটা মন্দির আছে। আর নতুন একটা পার্ক করা হয়ছে। 

 

চিত্রা পাড়ে বাঁধা ঘাট দেখতে আসা শিক্ষার্থী ইমন শেখ বলেন, জমিদারদের আমলে অনেক স্থাপনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোনোকিছুই অবশিষ্ট নাই। ওই পাশে একটা পাথরের তৈরি মন্দির আছে। তবে সব স্থাপনার ভিতর থেকে এই বাঁধাঘাট টাই শুধু দেখার মত টিকে আছে। নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসে এই স্থাপনা দেখতে।

এসব বিষয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শারমিন আক্তার জাহান বলেন, স্থাপনার স্বকীয়তা বজায় রেখেই এগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। জমিদারদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে আরও সুন্দর করে কীভাবে ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

প্রতিনিধি/টিবি