সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ’

মো. নাঈম ইসলাম, শেরপুর
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ’

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোঘল আমলে নির্মিত ‘ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ’। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাঘড়া লস্কর এলাকায় এই মসজিদটি বাংলা ১২২৮ সনে যা ইংরেজী সাল গণনা অনুযায়ী ১৬০৮ সালে নির্মিত হয়।

কথিত আছে ‘পালানো খা’ ও ‘জব্বার খা’ নামে দুই সহোদর কোনো এক রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। কয়েকশ বছর আগে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই দুই ভাই বাংলার ঝিনাইগাতি এলাকায় এসে আশ্রয় নেন এবং সেখানে মসজিদটি নির্মাণ করেন।


বিজ্ঞাপন


মসজিদটির বিশেষত্ব হল যে, এর ইটগুলো চারকোণা টালির মতো। ইতিহাস থেকে জানা গেছে, আজ থেকে প্রায় ছয়-সাতশ বৎসর পূর্বে এই ইটের ব্যবহার ছিল। মসজিদের আস্তরণে ঝিনুক চূর্ণ অথবা ঝিনুকের লালার সঙ্গে সুরকি, পাট বা তন্তু জাতীয় আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির নির্মাণ কৌশল গ্রিক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। মসজিদটির দরজায় কষ্টি পাথরে খোদাই করা আরবি ভাষায় এর নির্মাণকাল দেওয়া ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতে ওই কষ্টিপাথরটি চুরি হয়ে যায়। এই মসজিদটি বয়স সঠিকভাবে কেউ বলতে না পারলেও মসজিদের গাঁয়ের কারুকার্য, নির্মাণশৈলির নিদর্শন থেকে ধারণা করা হয়, এটি বক্সার বিদ্রোহী হিরঙ্গী খানের সময়কালে নির্মাণ করা হয়ে থাকতে পারে।

একটি মাত্র বিশাল আকৃতির গম্বুজ এবং এক দরজা বিশিষ্ট এই মসজিদটি বর্গাকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৩০ ফুট। মসজিদের ভিতরে দুটি সুদৃঢ় খিলান রয়েছে। মসজিদের ওপরে একটিমাত্র গম্বুজকে ঘিরে ছোট-বড় মিনার রয়েছে ১২টি। ভেতরে মেহরাব ও দেয়ালে বিভিন্ন রঙের ও কারুকার্যে ফুল ও ফুলদানি শোভা পাচ্ছে। এই মসজিদটির দেয়ালের প্রস্থ বা ব্যাস ৪ ফুট যার গাঁথুনি চুন ও সুরকি দিয়ে করা হয়েছে। খান বাড়ির খান বংশের লোকজনের ওয়াকফ করা ৫৮ শতাংশ জমির বিশাল এলাকা নিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে খান বাড়ি জামে মসজিদ। তবে মূল ভবন ও বারান্দা রয়েছে ১৭ শতাংশ জমির ওপর আর বাকি ৪১ শতাংশ জমিতে রয়েছে কবরস্থান। তবে পরিচর্যার অভাবে এখন বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে মসজিদটি। যদিও কয়েকবছর ধরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে মসজিদটির মেরামত ও সৌন্দর্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে।

মসজিদের ভেতর ইমাম ছাড়া তিন কাতারে দশ থেকে বারোজন করে মোট ত্রিশ থেকে ৩২ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরে বারান্দায় আরও কমপক্ষে ১০০ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। এ নিয়ে সব মিলিয়ে ওই সমজিদে প্রায় দেড়শ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

এছাড়া মসজিদের সামনে বাকী ৪১ শতাংশ জায়গায় কবরস্থান। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের নির্মাণ কৌশলে গ্রীক ও কোরিন থিয়ান রীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।


বিজ্ঞাপন


তবে চুরি যাওয়া মোগল আমলের সেই খোদাই করা পাথরটির দাম কোটি টাকা, বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চুরি যাওয়া পাথরটি দীর্ঘদিনেও উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা।

মসজিদ কমিটির তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চুরির ঘটনাটা জানার পরপরই ২০২৩ সালের ১৯ তারিখ সকালে ময়মনসিংহের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানাই। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন এবং ঝিনাইগাতী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু এরপর সেই বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। এই মসজিদ আমাদের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। চুরি যাওয়া পাথরটি দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।

ঘাগড়া লস্কর ‘খাঁন বাড়ি’র মসজিদের খতিবের দায়িত্বে থাকা মুফতি রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা হতে ভ্রমণপিপাসুরা এবং মুসল্লিরা এ মসজিদে আসেন। তারা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। আমরা মসজিদের কিছু কাজের জন্য সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা চাচ্ছি।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর