জেলা প্রতিনিধি
১৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর দোল পূর্ণিমার মেলায় জমে উঠেছে ঘোড়ার হাট। বিজলি, কিরণমালা, রানী, সুইটি, ভারতীয় তাজীসহ আরও কত যে বাহারি নামের ঘোড়া আনা হয়েছে। এদের ক্ষিপ্ততা আর বুদ্ধিমত্তায় মেলে নামের সার্থকতা। দুলকী চলনে বিদ্যুৎগতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার এমন নানামুখী গুণের কারণে ঘোড়াগুলোর কদরও বেশি। পছন্দের ঘোড়া ক্রয় করতে ক্রেতাদের মধ্যেও চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। মেলায় ঘোড়া দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ।
মেলার আয়োজকরা জানান, উত্তরাঞ্চলের একমাত্র ঘোড়া বেচাকেনা হয় গোপিনাথপুর দোলের মেলায়। সারাদেশ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন এখানে। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী চলে এ মেলা। সবকিছু মিলে এ মেলা এক মাস চললেও পশুর মেলা হয় প্রথম ১০দিন।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) দোল পূর্ণিমার দিন থেকে মেলায় অবস্থান নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল কেনাবেচা হয় এ মেলায়। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় এখন মুখরিত ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর মেলার ঘোড়ার মেলা। দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড় দৌড়। এবার ভারতীয় একটি তেজি ঘোড়ার দাম হাঁকা হয় আড়াই লাখ টাকা।
মেলা কমিটির আয়োজকরা জানান, ৫১৬ বছরের পুরোনো এ মেলা। শরু থেকেই ঘোড়া ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসত এখানে। বর্তমানে সে দেশগুলোর বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামে গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ।
স্থানীয়রা জানান, এ মেলায় দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রাজশাহী, জামালপুর, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়া ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আসেন মালিকরা।
মেলায় ঘোড়া ক্রয় করতে আসেন গাইবান্ধার মাঠের পাড়া গ্রামের আবুল ব্যাপারী। তিনি একটি ঘোড়ার দাম হাঁকিয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আরও ২/১টি দেখার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন। জামালপুরের রফিকুল ইসলাম জানান, ৪৫ বছর ধরে ঘোড়া নিয়ে তিনি এ মেলায় আসেন। এবার ছোট-বড় ৪৭টি ঘোড়া এনেছেন, এখনও বেচা-কেনা শুরু হয়নি বলে জানান। ক্রয়-বিক্রয়ের ছাপ (টোল আদায়ের রশিদ) বের হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের মেলায় অবস্থান করতে হবে।
এবার মেলায় সর্বোচ্চ সাড়ে আড়াই লাখ টাকা যে ঘোড়াটির দাম হাকা হয়েছে তার মালিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিবগঞ্জ উপজেলার সোনাইমুখী গ্রামের ইউনুস আলী। তিনি জানান, ঘোড়াটির বয়স পাঁচ বছর। এটি ভুটানের ভুটিয়া ঘোড়া। দ্রুত দৌড়াতে পারে। ঘোড়াটির যত্ন নিতেন তিনি নিজেই।
ঘোড় সওয়ারি ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, এ মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঘোর দৌড়ের বিস্তীর্ণ মাঠের প্রয়োজন। মেলার এরিয়া সংকুচিত হওয়ায় ঘোড়া বেচাকেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
মেলা কমিটির সভাপতি ও গোপিনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, ঘোড়ার মেলা হলেও গ্রামীণ মেলার সব আয়োজনই করা হয়েছে। এত বড় মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই। রমজান মাসের কারণে এবার মেলায় সব ধরনের বিনোদনমূলক যেমন সার্কাস ও যাত্রাপালা বন্ধ রাখা হয়েছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, মেলা উপলক্ষ্যে বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে গোপিনাথপুরে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস