জেলা প্রতিনিধি
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদশ্রী দাখিল মাদরাসার ভবন নির্মাণ কাজ ৭ বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। বছরের পর বছর ধরে মাদরাসার পুরো মাঠসহ শ্রেণিকক্ষ দখলে নিয়ে মালপত্র রেখেছে ঠিকাদারের লোকজন। এতে করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
এ নিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিলেও উলটো ঠিকাদারের লোকজন হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ করার অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারকে বিরুদ্ধে।
নেত্রকোনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ও মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদন উপজেলার প্রত্যন্ত কদমশ্রী গ্রামে ১৯৪২ সালে কদশ্রী দাখিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আবাসন ও শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় ১৯৯৫ সালের দিকে এক তলা একটি ভবন নির্মাণ করে সরকার। শিক্ষার্থী বেশি থাকায় শ্রেণিকক্ষের সংকট কাটেনি। বর্তমানে মাদরাসাটিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
![]()
শিক্ষা প্রকৌশলের অর্থায়নে ২০১৮ সালে কদমশ্রী দাখিল মাদরাসায় একটি ৪ তলা ভবন নির্মাণ করার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে নেত্রকোনার মামুন সৈকত নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে কাজ শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
২০১৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঠিকাদারের লোকজন মাদ্সার কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে রেখেছে। এ নিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ করলেও কোনো রকম প্রতিকার মিলছে না। উলটো ঠিকাদারের লোকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও নির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট, পাথর, বালু, সিমেন্ট, পাথর ও মরিচা ধরা রড ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
![]()
এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার মাদরাসায় গেলে দেখা যায়, পুরো মাদরাসা প্রাঙ্গণে ইট, পাথর, বালু ও রড ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দশম শ্রেণির কক্ষে সিমেন্টের গোডাউন করেছে। এ পাশে সিমেন্ট ও অন্য পাশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। নবম শ্রেণির কক্ষটিতে ঠিকাদারের লোকজন বিছানা পেতে বসবাস করছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই।
এসময় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার, রিয়া মনি ও ফারজানা আক্তার জানায়, আমাদের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে সিমেন্ট রাখা হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই সিমেন্ট দিয়ে শ্রেণিকক্ষ দখল করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৩০ জন শিক্ষার্থী বসার মতো সুযোগ না থাকায় এখন আর কেউ মাদরাসায় আসতে চায় না। আজ শুধু আমরা চারজন আসছি।
তারা আরও জানায়, যখন ক্লাস চলে তখন শ্রমিকরা হুট করে চলে আসে সিমেন্ট নিতে। তখন আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছি। আমরা এর প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে মাদরাসার সুপার এটিএম মাইদুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করেছে ২০১৯ সালে। শেষ করার কথা ২০২৩ সালে কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি। শ্রেণিকক্ষে মালপত্র রাখতে বার বার নিষেধ করলেও ঠিকাদারের লোকজন মানছে না। কয়েকটি বছর ধরে মাদরাসার পাঠদানের খুবই সমস্যা হচ্ছে।
![]()
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজাত হুসাইন জানান, কাজ শেষ করার জন্য সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোনো রকম নিম্নমানের সামগ্রী আমরা ব্যবহার করছি না। তবে শ্রেণিকক্ষে দখলের বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে মাদরাসা থেকে সটকে পড়েন।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহি আলম জানান, কদশ্রী মাদরাসার কাজ নিয়ে একটু অসুবিধায় আছি। ঠিকাদারকে বার বার বলেও কাজ শেষ করতে পারছি না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
বিষয়টি অবহিত করলে মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অহনা জিন্নাত বলেন, বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস