জেলা প্রতিনিধি
০১ জুন ২০২২, ০২:১৬ পিএম
শেরপুরের শ্রীবরদীতে প্রথমবারের মতো ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো ধান’ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন চার উদ্যোক্তা। দেশের বাইরে থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করে চাষ করেছিলেন তিন একর জায়গাজুড়ে। এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই কালো ধান। তাদের আশা, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এই বীজ জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া। এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তারা শ্রীবরদী থেকে এই বীজ পুরো জেলায় সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার চককাউরিয়া গ্রামের চার বন্ধু (মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন, স্বপন আহসান, নিশাত ও শান্ত) চীন থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে ১০ কেজি কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। পরে তারা প্রথমবারের মতো তিন একর জায়গাজুড়ে চাষ করেন এই ধানের বীজ। এতে সব কিছু মিলিয়ে তাদের খরচ হয় এক লক্ষ টাকা। এরই মধ্যে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় প্রথমবারের মতো কালো ধানের ধানের আবাদ হয়েছে। এই ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই ধানগাছের পাতা ও কাণ্ডের রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। ওষধি গুণাগুণের জন্য এই চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ও বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এই চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এই ধান চাষের উদ্যোক্তা মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন বলেন, ‘চাকরির পিছে না ঘুরে নিজেরাই কিছু করবো— এই চিন্তা থেকেই আমরা চারজন মিলে ১০ কেজি ব্ল্যাক রাইস ধানের বীজ সংগ্রহ করি চীন থেকে। পরে তিন একর জায়গা ভাড়া করি। সেই জমিতে সব কিছু করে আমাদের মোট খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। প্রথমে আমরা একটু চিন্তায় ছিলাম যে, এই ধান হবে কি হবে না। পরে কৃষি বিভাগের দেখাশোনা ও পরামর্শক্রমে আস্তে আস্তে ফলন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ধানও পাঁকতে শুরু করে। আমরা হিসেব করে দেখেছি এই তিন একরের ক্ষেত থেকে বীজ, ধান বিক্রি ও খাওয়াসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় হবে।’
আরেক উদ্যোক্তা স্বপন আহসান বলেন, ‘এই বীজ আমরা জেলায় ছড়িয়ে দিতে চাই। এজন্য আমাদের কৃষি বিভাগের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আমরা তিন হাজার টাকা কেজি কিনে আনলেও আমরা চিন্তা করেছি আগ্রহী কৃষকদেরকে এক হাজার টাকা করে বীজ দেবো। উদ্দেশ্য, কৃষকরা যাতে খুব সহজে অল্প খরচে বেশি লাভবান হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে এই ধান যাতে সবাই চাষ করতে পারে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কালো ধান কাটা। বেশি লাভজনক হওয়ায় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় আগামীতে কালো ধান চাষ করার আগ্রহের কথা বলছে স্থানীয় কৃষকরা।
চককাউরিয়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাপু, হুনতাছি তো কালা ধানে লাভ বেশি, আমি তাদেরকে বলেছি আমাকে যেন চারা দেয়, আমি আগামীতে লাগামু এক একর। কৃষি অফিসও কইতাছে, এই ধান নাকি ঔষধের মতো কাজ করে। তাই আগামীতে লাগাবো।’
আরও পড়ুন: কালো ধানে বাজিমাত তেঁতুলিয়ার সাদেকুলের
কৃষক শামসুল হক বলেন, ‘এই বন্দের মধ্যে নতুন এডা ধান আইছে, দেখতে কালা কালা। আবার হুনতাছি বিরাট লাভ, লাগাইতে খরচ কম, তাই আমি সামনের বার আবাদ করমু। ধানের চারা চাইছি তাদের কাছে, তারা দিবার চাইছে, এক হাজার টাকা করে চাইতাছে।’
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমুড়া গ্রামের মাজহারুল ইসলাম বাবু কালো ধান দেখতে এসেছেন। এসময় তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। বাবু জানান, ১০ কেজি ধান আগাম নিয়ে টাকা বায়না করেছেন তিনি। কিছুদিন পর এসে ধান নিয়ে যাবেন।
এদিকে অনলাইনে বিভিন্ন চাল বেচাবিক্রি করেন শামীম আহম্মেদ। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অর্ডার পেয়েছি ব্লাক রাইসের। আশা করছি সামনের বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ চাল অর্ডার হবে।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন দিলদার বলেন, উদ্যোক্তারা অনেকবার আমার অফিসে এসেছে। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর চাষ বাড়ালে কৃষকরা খুবই লাভবান হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মুহিত কুমার দে ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ওই চার উদ্যোক্তার ধান ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। ক্ষেতের ধান খুব ভালো হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে জেলায় অন্যান্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। কৃষি বিভাগ সব সময় তাদের পাশে থাকবে।
তার মতে, এ ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়াও ওষুধের গুণাগুণের জন্য ‘ব্ল্যাক রাইস’ চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এ চালের ব্যাপক চাহিদা।
প্রতিনিধি/এএ