images

সারাদেশ

সোনালী আমন ধানে ছেয়ে আছে মাঠ, কৃষকের ব্যস্ততা

জেলা প্রতিনিধি

১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম

পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় আশ্বিন-কার্তিক মাসকে বলা হতো অভাবের মাস। আমন ধান রোপণের পর থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত কৃষি শ্রমিকদের হাতে কোনো কাজ থাকত না। এই সময়টাতে অনেকে কাজের সন্ধানে চলে যেত ভিন্ন জেলায়। কিন্তু দিন বদলে গেছে। এখন আর পঞ্চগড়সহ এই এলাকার লোকজনদের আর কাজের সন্ধানে খুব বেশি একটা জেলার বাইরে যেতে হয় না। আগাম জাতের ধান চাষ এবং সেই জমিতে আগাম শীতকালীন শাক সবজি আবাদের কারণে কৃষি শ্রমিকদের কাজ লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন

পাহাড়ে কফি চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন ঙুইইন ম্রো

কৃষকরা জানান, আদিকাল ধরেই পঞ্চগড়ের কৃষকরা সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর আমন ধান চাষ করে আসছেন। আগে অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে আমন ধান কাটা শুরু হলেও এখন তার থেকে এক-দেড় মাস আগেই কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছেন আমন ধান। বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে উত্তরের জেলাগুলোতে।

thumbnail_IMG_20241114_134008

আগামে জাতের ব্রি ধান-৩৩, ৫৬, ৬২, ৭২, বিনা-৭ ধান, ভারতীয় জাতের গুড়ি পারি, স্বর্ণা পারিসহ বিভিন্ন ধান ইতোমধ্যে পাকা শুরু করেছে। পুরনো জাতের আমন ধান আবাদ করে যেখানে কৃষকরা প্রতি বিঘায় ৮-১০ মণ ধান পেত, আগাম জাতের ধান আবাদ করে তারা ১৫-২০ মণ পর্যন্ত ধান পাচ্ছেন। শুরুতে ধানের দাম কিছুটা কম হলেও কাচা খড় বিক্রয় করে অধিক টাকা আয় করতে পারছেন কৃষকরা।

thumbnail_pic

এক বিঘা জমির ধান কেটে মাড়াইয়ের পর কাচা খড় হিসেবে ধানের আটি বাজারে বিক্রয় হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়। অনেকে আবার ধান কাটার পর দ্রুত জমিতে চাষ দিয়ে মাটি শুকিয়ে নিচ্ছেন। কিছু দিনের মধ্যে ধানের জমিতে আগাম জাতের আলু, সরিষাসহ শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করবেন কৃষকরা।

তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের কৃষক নিয়াজিত হোসেন জানান, এবার খুব কষ্ট করে মানুষের প্রায় আড়াই একর জমি ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কাটা শেষে বাড়িতে তুলব।

thumbnail_IMG_20241114_134241

পঞ্চগড় জেলা সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের খোলাপাড়া গ্রামের কৃষক নুর আলম জানান, এবার তিনি ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে সব ধান পেকে গেছে। বাড়ির খাওয়ার জন্য এক বিঘা জমির ধান কেটে বাড়িতে এনেছেন। ফলন এসেছে প্রায় ২০ মণ ধান। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

মৌসুমের শেষে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পোকার আক্রমণ যেমন কম ছিল তেমনি ফলনও হয়েছে অনেক। এছাড়া এবার বাজারে ধানের দাম বেশ ভালো। জমি থেকে কেটে আনা প্রতি মণ ধান বিক্রয় হচ্ছে ১২শ থেকে সাড়ে ১২শ টাকা দরে।

thumbnail_IMG_20241114_134030

এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, চলতি আমন মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ১ লাখ ২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন ধান। তবে মৌসুমের শেষে বৃষ্টিতে শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে।

যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। এতে করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও বেড়ে যাবে। এছাড়া আগাম ধান কাটার পর সেই জমিতে আলু, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন শাক সবজি আবাদ করে অতিরিক্ত আয় করতে পারবেন।

প্রতিনিধি/এসএস