images

সারাদেশ

একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

জেলা প্রতিনিধি

২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৩ পিএম

সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলে সুমন হাসানকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে সাভার থানা রোডের সামনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় সুমন হাসানের। এরপর থেকেই পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অসুস্থ বাবা।

সুমন হাসান জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকার সাভারে একটি পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ করতেন।

স্থানীয়রা জানান, ছোট থেকেই অনেক দুঃখ কষ্টে বেড়ে উঠেছেন সুমন হাসান। তার বয়স যখন ১০ তখন সুমনের মা মারা যান। এরপর থেকে দাদি আর ফুফুর কাছেই থাকতেন সুমন। এর কিছু দিনের মধ্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাবা বিল্লাল হোসেন। কিন্তু সৎ মায়ের সংসারে সুখ হয়নি সুমনের। সুমনের বয়স যখন ১২ তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা বিল্লাল হোসেন। করানো হয় অপারেশন। এরপর থেকেই আর কোনো ভারী কাজ করতে পারেন না তিনি। তাই যে বয়সে স্কুল ও খেলার মাঠে থাকার কথা সেই বয়সের সংসারের হাল ধরেন সুমন। সংসার চালানোর জন্য জীবিকার তাগিদে চলে আসেন ঢাকার সাভারে। প্রথমে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সুমন। এরপর কয়েক বছর আগে চাকরি নেন একটা গার্মেন্টসে। এতে ভালোই চলতে থাকে সুমনের সংসার। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে সাভার থানা রোডের সামনে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুমন হাসানের। তার মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অসুস্থ বাবা ও তার পুরো পরিবার। এই ঘটনায় নিহত সুমনের খালু মো. নিপু আলী বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত সুমনের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার ছেলের পুরো জীবনটাই গেলে দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে। যে বয়সে সুমনের খেলাধুলা করার কথা তখন সুমন অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমার সংসার চালাতো। আমি অসুস্থ থাকায় কোনো কাজ করতে পারতাম না। তাই ছোট বয়সেই সুমন সংসারের দায়িত্ব নেয়।

তিনি আরও বলে, আমার একটাই কষ্ট আমার ছেলে কোনো দিন সুখ পেল না। শেষে তার জীবনটাও গেল পুলিশের গুলিতে। সেখানে আমার সন্তানের আমার লাশ কাঁধে নেওয়ার কথা, সেখানে আমি আমার সন্তানের লাশ কাধে নিয়ে কবর দিয়েছি। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো? যারা আমার ছেলেকে গুলি করেছে হত্যা করেছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

নিহত সুমনের দাদি হালিমা খাতুন বলেন, সুমনের মা মারা যাওয়ার পর থেকে সুমন আমার কাছেই থাকত। আমার কবরে আমার নাতিনের (সুমন) মাটি দেওয়ার কথা। কিন্তু আমার সামনেই আমার একমাত্র নাতিনকে করব দেওয়া হলো। আমার একটা মাত্র ছেলে আর ঘরে সুমনও একমাত্র ছেলে ছিল। এখন আমাদের বংশে আর কোনো প্রদীপ থাকলো না। যারা আমার নাতিনকে খুন করছে, আমি তাদের বিচাই চাই।

সুমনের ফুফু মর্জিনা বেগম জানান, আমার বাবা আন্দোলনে যাওয়ার আগে বলে গেছিল, দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরে আসবে। কিন্তু আমার বাবা যে আন্দোলনে গেল আর তো ফিরে আসলো না। ফিরে আসলো তার লাশ।

তিনি আরও বলেন, সুমনের উপার্জনেই সংসার চলতো। আমার অসুস্থ ভাই, বৃদ্ধা মায়ের এখন আর উপার্জনের কেউ নাই। এখন সংসারে তাদের দেখার মত আর কেউ নাই।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সুমন হাসানের পরিবারকে ইতোমধ্যে আর্থিক ও খাদ্য সহয়তা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের এমন সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

প্রতিনিধি/টিবি