শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার সাভারে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার রমজান আলী (৩০)। তার মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও তেমন কেউ খোঁজ নেননি পরিবারের। অপরদিকে শোকে বিহ্বল হয়ে আছে তার পরিবার।
নিহত রমজান আলী নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার সাঐল হাজিপাড়ার এলাকার মো. নজরুল ইসলামের ছেলে। পরিবারে রমজানের স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কবর থেকে উত্তোলন করা হলো নিহত শিক্ষার্থীর লাশ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ঢাকার সাভারের বাইপাইলে বেলা ১১টার দিকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করে পুলিশ। এ সময় রমজান আলীর বুকের বাঁ পাশে গুলি লাগে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া কেউ এ শহীদ পরিবারের খোঁজ নেয়নি। অর্থের অভাবে চাঁদা তুলে রমজানের জন্য দোয়ার অনুষ্ঠান করতে হয়েছে পরিবারকে।
মা রোজুফা বেগম বলেন, খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে কত কষ্টে মানুষ করেছি। ছেলে পড়াশোনা করতে ঢাকায় যায়। সেখানে মাছের আড়তে কাজের পাশাপাশি পড়াশোনাও করত। স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকত। সংঘাতে ছেলে রমজান মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী-মেয়ে ও পরিবার এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি। স্ত্রী ও সন্তান কীভাবে চলবে তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। তাদের পাশে যদি সরকার দাঁড়ায়, তাহলে পরিবারটা বাঁচবে।
আরও পড়ুন: বউয়ের চেইন বিক্রি করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আরিফ
বিজ্ঞাপন
নিহত রমজান আলীর বাবা নজরুল ইসলাম জানান, ছেলের মৃত্যুর পর তেমন কেউ আর খোঁজ নেয়নি। গত সপ্তাহে ছেলের মৃত্যুসনদের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টার সঙ্গে দেখাও করেছেন। তবে তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। পরে আর কেউ খোঁজ নেয়নি।
তিনি বলেন, আমার ছেলে রমজান মানুষের বাড়িতে কাজ করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। সে এসএসসি পাশ করেছিল। এরপর সংসারের নানা সমস্যায় আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। এরপর জমি বিক্রি ও ধার-দেনা করে তাকে সৌদি আরব পাঠাই। সেখানে দুই বছর কাজ করার পর আবার সে দেশে ফিরে আসে। দেশে আসার পর আবার পড়ালেখা শুরু করে রমজান। এরপর নিজ চেষ্টায় এইচএসসি পাস করে বিএ-তে ভর্তি হয়। পরে ঢাকার বাইপাইলে গিয়ে মাছের আড়তে কাজ নেয় রমজান আলী। পাশাপাশি পড়াশোনাও করে সে। এরপর গত ৫ আগস্ট সকালে বাইপাইলে মিছিলের যায়। সেখানে সে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যায় সে।
তিনি আরও বলেন, এখন তার স্ত্রী ও সন্তানকে কে দেখবে? তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কে নিবে? সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা এখনও আশায় আছি সরকার তার স্ত্রী -সন্তানের দায়িত্ব নিবে।
প্রতিনিধি/ এমইউ