জেলা প্রতিনিধি
০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৭ পিএম
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজাসহ চারদিন ছুটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। সাপ্তাহিক ও পূজোর এই ছুটির সময়ে কক্সবাজারে অন্তত ৫ লাখ পর্যটক আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকরিজীবী অগ্রিম ছুটি নিয়ে চলে এসেছেন সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে। ধীরে ধীরে পর্যটকের ঢল নামতে শুরু করেছে সমুদ্র সৈকতে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষে দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তাই এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল হবে। পূজা উপলক্ষে অন্তত শতকোটি টাকা বাণিজ্যের কথা বলছেন তাঁরা। কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল-রিসোর্টে অধিকাংশ কক্ষ আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিছু হোটেলে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্রেতা বেড়েছে শহরের বার্মিজ মার্কেট, শুটকি দোকানসহ বিভিন্ন মার্কেটে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা যায়, পর্যটকের ঢল নেমেছে। কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখো পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মঙ্গলবার সকাল ও সন্ধ্যায় শহরের সড়ক গুলোতেও ভিড় দেখা গেছে।

সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জেলা সদরের বাইরে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক এসব পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে পর্যটকরা ভ্রমণে যাচ্ছেন।

সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পর্যটক সমির মল্লিকের। তিনি জানান, এবার দুর্গাপূজার আগে অফিস থেকে অগ্রিম ছুটি নিয়েছি৷ পুরো ছুটি কক্সবাজারে কাটাবো। অনেকদিন সমুদ্র সৈকতে আসা হয় না৷ পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসে অনেক ভাল লাগছে।

ঢাকা মিরপুর থেকে আগত পর্যটক সনজিত সেন বলেন, পুজোর পুরো ছুটি এখানে কাটাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু কক্সবাজারে খাবার, রুম ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম অনেক বেশি। ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসে যে খরচ। সেই একই খরচে থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর গিয়ে ভ্রমণ করে আসা সম্ভব। সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত পণ্য মূল্যের কারণে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্যে অনেক ক্ষতি হতে পারে।
সিলেট থেকে আগত পর্যটক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আসলে কক্সবাজারে সবকিছুর দাম বেশি। বাংলাদেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে কক্সবাজারের চেয়ে পণ্যের দাম অনেক কম।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, রুম ভাড়ায় ৪০-৫০ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি শরৎ প্যাকেজ ও ইলিশ উৎসবের আয়োজন করছে হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহে দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিন বন্ধ থাকায় এ সময় পর্যটন স্বরূপে ফিরতে পারে বলে আশা ব্যবসায়ীদের। কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় তিন লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এবারের পর্যটন মৌসুম আগের চেয়ে অনেক ভাল হবে। এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে ধারণা হোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি নেতাদের।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে থাকবে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ। কন্ট্রোল রুম, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার পুরো সৈকত পুলিশের নজরদারির আওতায় আছে। পর্যটক হয়রানি রোধে আমাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পর্যটক হয়রানি রোধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টাঙানো রয়েছে কি না সবসময় তদারকি করা হচ্ছে। সৈকতের লাবনী-সুগন্ধা-কলাতলীসহ একাধিক পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্র। পর্যটকরা যে কোনো অভিযোগ এখানে করতে পারবেন।
প্রতিনিধি/ এজে