জেলা প্রতিনিধি
২৬ মে ২০২২, ১০:২১ পিএম
ঢাকা মেইল-এ সংবাদ প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেয়েছেন নীলফামারীর সেই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে নীলফামারী সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক এমদাদুল হক প্রামাণিক মশিউরকে এ ভাতা কার্ড প্রদান করেন। এর আগে বুধবার (২৫ মে) দুপুরে ‘শিকলবন্দি মশিউর, নিঃস্ব পরিবার’ শিরোনামে একটি মানবিক আবেদনের সংবাদ (ভিডিওসহ) প্রকাশ করে নতুন প্রজন্মের অনলাইন ঢাকা মেইল ডটকম।
চার বছরের বেশি সময় ধরে শিকলবন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক মশিউর রহমানের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার রামগঞ্জ ইউনিয়নের বাহালিপাড়া মাস্টার পাড়ায়। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে অভাবের সংসারের হাল ধরবে ছেলে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মশিউর। শুরু হয় পাগলামি। মারধর করতে শুরু করে বাবা মাসহ পাড়া প্রতিবেশীদেরকেও। হুটহাট ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি থেকে হারিয়ে যেত সে। এরপর দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিবারের সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসার পরও সুস্থ না হলে বাধ্য হয়ে চার বছর ধরে মশিউরকে শিকলবন্দি করে রেখেছে তার পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মশিউরের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হতে বসেছে তার পরিবার। কিন্তু সুস্থ করে তুলতে পারেননি।
মশিউরের মা ছেরাতন বেগম বেওয়া বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে কোনো কোম্পানিতে কাজ করবে। হঠাৎ কী এমন হলো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পরিবারের মানুষের উপর আক্রমণ করতে থাকে।’
‘যখন হামার উপর মারামারি করত, পাড়া প্রতি বেশীক মারে, হুট হাট হারে (হারিয়ে) যায়, সেখন খুঁজি আনি। ৪-৫ বছর হয় শিকল দিয়া বাঁধি থুচি। যা আছিলো জমি যায়গা সব শেষ করছি। এখন পথের ভিখারি। একটা ছেলে, সুস্থ্য থাকিলে কামাই করি হামাক খাওয়ার পাইতো।’
মশিউরের চাচাতো ভাই জানান, একসাথে পড়াশোনা, খেলাধুলা করতেন তারা। ‘হঠাৎ এক মাত্র ছেলে এমন হওয়ায় পরিবারটির সব এলোমেলো হয়ে গেছে। তার পেছনেই সব খরচ করে আজ পথের ভিখারি তারা।’
এদিকে ভাতা কার্ড পাওয়ার পর ঢাকা মেইলের নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিকে ধন্যবাদ জানিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে মশিউরের বাবা সালাহ উদ্দিন ওরফে টন্না মামুদ বলেন, ‘আইজ ১০-১২ বছর কোনো অনুদান পাই নাই। বাবা তোমার গুলার জন্য এই বার ভাতা কার্ড পাইনো। আল্লাহ তোমার ভালো করুক। এ সময় উপস্থিত মশিউরের আত্মীয়স্বজনরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।’
সমাজ সেবা অধিদফতরের রামনগর ও সোনারায় ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারিগরি অফিসার উম্মে হাবিবা ঢাকা মেইলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই মানবিক বিষয়টি কোনোভাবে এড়িয়ে গেছে। ধন্যবাদ বিষয়টি তুলে আনার জন্য। আমরা একদিনের মধ্যে তার ভাতার ব্যবস্থা করেছি।’
নীলফামারী সমাজ সেবা অধিদফতরের উপপরিচালক এমদাদুল হক জানান, ‘ঢাকা মেইলের এমন মানবিক সংবাদে তাদের কোনো কারণে এড়িয়ে যাওয়া বিষয়টি উঠে এসেছে। ঢাকা মেইলের প্রতিনিধি তাদের সাথে যোগাযোগ করা মাত্রই মশিউরের বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ শুরু করেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাতা কার্ড ইস্যু করেন।
প্রতিনিধি/এজে/এএ