বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

শিকলবন্দি মশিউর, নিঃস্ব পরিবার

রাজু আহম্মেদ
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২, ১২:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

নীলফামারীতে প্রায় চার বছরের বেশি সময় ধরে শিকলবন্দি জীবন পার করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। তার চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়েছে পরিবার।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী সদর উপজেলার রামগঞ্জ ইউনিয়নের বাহালিপাড়া মাস্টার পাড়ার সালেহ উদ্দিন ওরফে টন্না মামুদের একমাত্র ছেলে মশিউর রহমান। বাবা-মায়ের স্বপ্ন  ছিল পড়াশোনা করে অভাবের সংসারের হাল ধরবে ছেলে। কিন্তু সপ্তম শ্রেনীতে পড়াকালীন হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মশিউর। শুরু হয় পাগলামি। মারধর করতে শুরু করে বাবা মাসহ পাড়া প্রতিবেশিদেরকেও। হুটহাট ভারসাম্যহীন অবস্থায় বাড়ি থেকে হারিয়ে যেত সে। এরপর  দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিবারের সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসার পরও সুস্থ না হলে বাধ্য হয়ে চার বছর ধরে মশিউরকে শিকল বন্দি করে রেখেছে তার পরিবার।

মশিউরের মা ছেরাতন বেগম বেওয়া বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে কোনো কোম্পানিতে কাজ করবে। হঠাৎ কী এমন হলো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পরিবারের মানুষের উপর আক্রমণ করতে থাকে।’


বিজ্ঞাপন


‘যখন হামার উপর মারামারি করত, পাড়া প্রতি বেশিক মারে, হুট হাট হারে (হারিয়ে) যায়, সেখন খুঁজি আনি। ৪-৫ বছর হয় শিকল দিয়া বাঁধি থুচি। যা আছিলো জমি যায়গা সব শেষ করছি। এখন পথের ভিখারি। একটা ছেলে, সুস্থ্য থাকিলে কামাই করি হামাক খাওয়ার পাইতো।’

এ সময় কান্না জড়িত কন্ঠে ছেলের শেষ চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে সাহায্য আবেদন করেন তিনি। 

মশিউরের চাচাতো ভাই জানান, একসাথে পড়াশোনা, খেলাধুলা করতেন তারা। 

‘হঠাৎ এক মাত্র ছেলে এমন হওয়ায় পরিবারটির সব এলোমেলো হয়ে গেছে। তার পেছনেই সব খরচ করে আজ পথের ভিখারি তারা।’


বিজ্ঞাপন


 সহায়তা পেলে হয়তো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পরিবারের হাল ধরতে পারত উল্লেখ করে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।

বাবা সালেহ উদ্দিন ওরফে টন্না মামুদ বলেন, ‘যা ছিল সব ওর চিকিৎসার পেছনে খরচ করছি। চেমারম্যানের কাছোত গেছিনো গুরুত্ব দেয় নাই। বারো তেরো বিঘা জমি শেষ আজ কিছু করির ও পাই না, খাবারও পাই না, খুব কষ্ট।’

এ বিষয়ে রামনগর ইউপি চেয়ারম্যান ওবাইদুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে মশিউরের বাবার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সে একটা পাগল, যখন পাগলামি বাড়ে তখন তাকে শিকল বাধি রাখে। সে এবং তার পরিবারের কেউ আমার কাছে আসেনি।’
   
এ নিয়ে জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের পরিচালক এমদাদুল হক প্রামাণিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রতিবন্দি ভাতার ব্যবস্থা করব। এছাড়াও তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সমাজ সেবা অধিদফতর থেকে চেষ্টা করা হবে।’

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর